মধ্যেপ্রাচ্যে আশিয়ান দেশের পর বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হয়েছে ইউরোপের দিকে। এবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে।
সর্বশেষ রোমানিয়ার জাহাজ নির্মাণ কোম্পানিতে অর্ধশত শ্রমিক যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পরবর্তী সময়ে আরো বেশকিছু কর্মী জাহাজ, ইমরাত নির্মাণ ও গার্মেন্ট কোম্পানিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সে লক্ষ্যে আগামী ৭ নভেম্বর কর্মী বাছাইয়ের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে বলে রিক্রুটিং এজেন্সি এশিয়া কন্টিনেন্টাল বিডির কর্ণধার লোকমান শাহ ও ঢাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আব্দুস সালাম নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান শাখা-১ উপসচিব সুষমা সুলতানা স্বাক্ষরিত নিয়োগানুমতি সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয় এশিয়া কন্টিন্টোল গ্রুপকে।
চিঠিতে বলা হয়, উপযুক্ত বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্ট মেসার্স এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপের (বিডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোমানিয়ায় ‘সান্তেরুল নেভাল কন্সটানটা সা’ কোম্পানির অধীনে মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে শর্তসাপেক্ষে ৬০ জন পুরুষ কর্মী নিয়োগানুমতি জ্ঞাপন করা হলো।’
লকস্মিথস ফর স্টিল হুল ব্লক ফেব্রিকেশন, পাইপ ওয়ার্কার্স ফর ফেব্রিকেশন অ্যান্ড ইন্সটলেশন অব পাইপ অ্যান্ড ওয়েল্ডার পদে ৬০ জন কর্মী নেয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, প্রত্যেক কর্মীর মাসিক বেতন হবে ৫৬০ মার্কিণ ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় অর্ধলক্ষ টাকার কাছাকছি।
নিয়োগানুমতির অন্যান্য সুবিধার বিষয়ে বলা হয়েছে, চুক্তির মেয়াদ দুই বছর (নবায়নযোগ্য), শিক্ষনবিসকাল ৯০ দিন, বিমানভাড়া রিক্রুটিং এজেন্ট বহন করবে, বাসস্থান, রেসিডেন্স পারমিট, যাতায়াত, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী কোম্পানি বহন করবে, আহার নিজের, চাকরির অন্যান্য শর্ত রোমানিয়ার শ্রমআইন অনুযায়ী প্রযোজ্য হবে।
মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগানুমোদন পাওয়া ওই চিঠির শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিটি ফ্লাইটে রিক্রুটিং এজেন্সির একজন প্রতিনিধি কর্মীর সাথে রোমানিয়া যাবেন অথবা সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরে কর্মীদের গ্রহণ করার জন্য রিক্রুটিং এজেন্সির একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। কর্মীদের কোভিড টেস্ট নিশ্চিত করা, প্রত্যেক গ্রুপে বাংলাদেশের কর্মীরা রোমানিয়া পৌঁছার পর রিক্রুটিং এজেন্সি অত্র মন্ত্রণালয়, বিএমইটি এবং বুখারেস্ট রোমানিয়া দূতাবাসে প্রতিবেদন দাখিল করবে। বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু করার আগে নির্বাচিত প্রত্যেক কর্মীর সাথে নিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে, বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদানের আগে বিএমইটিতে মূল চাহিদাপত্র/ক্ষমতাপত্র ও অন্যান্য মূল কাগজ দাখিল করতে হবে। কর্মীর ভিসা ও ফ্লাইট নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক অভিবাসন ব্যয় বাবদ সর্বোচ্চ চার লাখ ৯০ হাজার টাকা কর্মীর কাছ থেকে চেক/ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডারের মাধ্যমে গ্রহণ করা যাবে এবং তার প্রমাণপত্র বিএমইটির মহাপরিচালক বরাবর উপস্থাপন করার পাশাপাশি চুক্তিপত্রের কোনো শর্ত লঙ্ঘন হবে না, অনুমোদিত কর্মীরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে অবশ্যই চাকরি পাবে এবং প্রত্যেক কর্মীকে প্রস্তাবিত বেতন, আবাসন ও অন্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মীর থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে প্রত্যাবাসনের সম্পূর্ণ ব্যয় প্রদানে বাধ্য থাকবে মর্মে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দাখিল করতে হবে এবং ডাটাবেজ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অনুমোদিত কর্মী কর্মস্থলে ঠিকভাবে নিয়োজিত হয়েছেন কি না তা সরেজমিন যাচাইপূর্বক রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস প্রধানকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে বলে শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল রোমানিয়ার নতুন শ্রমবাজারে ৬০ জনের নিয়োগানুমতি পাওয়া রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী লোকমান শাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, রোমারিয়ার শ্রমবাজার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। ইতোমধ্যে জাহাজ নির্মাণ ও ইমারত নির্মান কোম্পানিতে লোক পাঠানোর লক্ষ্যে আমার প্রতিষ্ঠান নিয়োগানুমতি পেয়েছে। আগামী ৭ নভেম্বর উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানে আরো বেশকিছু শ্রমিক পাঠানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশে আসছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। ইতোমধ্যে রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসব কর্মীর ফ্লাইট শুরু হতে পারে।