বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আয়োজনে ঢাকা সেনানিবাসের মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে গতকাল দেশি-বিদেশি সামরিক এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ‘আর্মি চিফ’স কনক্লেভ’ শীর্ষক এক বহুজাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বক্তারা বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর ফলে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জ বেড়ে গেছে। যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তারা বিশ্বশান্তি রক্ষায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, পর্যাপ্ত লজিস্টিকস সহায়তা এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাজেট বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। সেমিনারে ‘ফিউচার ট্রেন্ড অব গ্লোবাল কনফ্লিক্ট : রোল অব ইউএন পিস কিপারস্’ শীর্ষক কি-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। এতে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে, ভুটান সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অপারেশন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দরজি রিনচেন, ফোর্স কমান্ডার ইউএন মাল্টি ডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন মালি লে. জেনারেল ডেনিস জিলেনসপোরে এবং ফোর্স কমান্ডার ইউএন মাল্টি ডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্য সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিজিয়ন লে. জেনারেল সিদকি ড্যানিয়েল ত্রাওর অংশ নেন। এ ছাড়া নৌ ও বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কূটনৈতিক ও সিনিয়র সম্পাদক-সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে বলে তিনি দৃঢ়চিত্তে জানান। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংঘাতগুলো আন্তরাষ্ট্রীয় বিরোধের চেয়ে তীব্রতর হয়ে উঠছে। তিনি তার বক্তব্যে কয়েকটি সমস্যার ওপর আলোকপাত করেন। প্রথমত. বর্তমান সংঘাতগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার পর্যন্ত বিভিন্ন মাত্রায় যুক্ত হয়েছে; দ্বিতীয়ত., প্রযুক্তির অস্ত্রায়নে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিরূপ ভূমিকা রয়েছে; এবং তৃতীয়ত., চলমান বৈশ্বিক মহামারীর কারণে শান্তিরক্ষার প্রকৃতি রূপান্তরিত হয়েছে। এই মহামারীর ফলে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থবহ পারস্পরিক সহযোগিতা, নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরি অবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
মূল বক্তব্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, অরাষ্ট্রীয় শক্তির উত্থান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, রাজনৈতিক সংকট এবং পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশন ক্রমশই চ্যালেঞ্জিং এবং জটিল হয়ে পড়ছে। তাঁর মতে, বর্তমান সময়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে শান্তিরক্ষা মিশনসমূহ পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষার জন্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে প্রথাগত কৌশলসমূহ সংশোধনের ওপর প্রাধান্য দেন। বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি-বেজড ইনফরমেশন শেয়ারিং, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, জাতিসংঘ সনদের পরিমার্জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো তৈরির ওপর জোর দেন জেনারেল আজিজ।
ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নাভারানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের উদীয়মান চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসমূহকে অত্যন্ত কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। কীভাবে যুদ্ধাঞ্চলগুলোতে সংঘাতের গতি প্রকৃতি ভিন্ন বলয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সশস্ত্র দলগুলো কীভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে সে বিষয়গুলোও তিনি তাঁর বক্তব্যে উপস্থাপন করেন।
জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নাভারানে বর্তমানে শান্তিরক্ষীরা কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা তুলে ধরে এই চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, জাতিসংঘের মতবাদে নমনীয়তা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, যথোপযুক্ত লজিস্টিকস সহায়তা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাজেট বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী এবং উপস্থিত অতিথিরা আগামী দিনগুলোতে বিশ্বে বিভিন্ন সংঘর্ষ মোকাবিলায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মতবিনিময় করেন।