পেঁয়াজ। ফাইল ছবি
ভারতের বিকল্প দেশগুলো থেকে এখন প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসছে। এই বন্দর দিয়ে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৫৫৫ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এভাবে সরবরাহ বাড়ায় বাজারেও পণ্যটির দাম কমছে। ফলে কিছুটা নিম্নমানের পেঁয়াজের ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এখন।
চট্টগ্রাম বন্দর ও পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি বাড়ায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫–২৫ টাকা কমেছে। সেখানকার আড়তে এখন ৪০–৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা পেঁয়াজ। আর খুচরায় দাম কমেছে কেজিপ্রতি ১০–১৫ টাকা। খুচরায় শুধু মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিদরে। অন্যান্য দেশের পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ভারতের বিকল্প দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানির বড় দুই স্টেশন টেকনাফ স্থলবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর। করোনায় মিয়ানমারে লকডাউনের কারণে স্থলবন্দরটি দিয়ে আমদানির পরিমাণ কম। এখন অন্যান্য বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে মূলত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দর জেটিতে জাহাজ থেকে প্রতিদিন পেঁয়াজবাহী শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কনটেইনার নামানো হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে, সে জন্য খালাসেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
কৃষিপণ্য হিসেবে পেঁয়াজ খালাসের আগে ছাড়পত্র নিতে হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে। সংস্থাটির উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, বন্দর থেকে এখন পেঁয়াজ খালাসের পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে। আবার নতুন করে আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা এখনো অনুমতি নিচ্ছেন।
বন্দর থেকে খালাস হওয়া পেঁয়াজ সরাসরি চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার মৌলভীবাজারে। এই দুই জায়গা থেকে মূলত সারা দেশে পেঁয়াজ সরবরাহ হয়। আমদানি করা পেঁয়াজ যেদিন বেশি বাজারজাত হচ্ছে, সেদিন দাম কমছে। বাজারে পাকিস্তান ও মিয়ানমারের ভালো মানের পেঁয়াজ বেশি বিক্রি হচ্ছে। এই দুই দেশের পেঁয়াজের স্বাদ ভারত ও দেশীয় পেঁয়াজের কাছাকাছি। তবে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা অনেক চালানের পেঁয়াজের মান খারাপ হয়ে গেছে। এগুলোর ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারক ফারুক আহমেদ বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। বন্দরে এসে পৌঁছানোর পরই দ্রুত বিক্রি করে দিতে হয়। হঠাৎ করে আমদানি বাড়ায় বাজারে দাম পড়ে গেছে। এখন বাজারে চীন, তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজ কেনা দামেই বিক্রি হচ্ছে।
২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮৭ হাজার টনের জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ও বাজারদর তুলনা করে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের যেসব ঋণপত্র (এলসি) খুলেছেন, তাতে গড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৩৮ টাকা। এর সঙ্গে খালাসসহ খরচ ধরলে প্রতি কেজি ৪২–৪৫ টাকা পড়ছে। আমদানিকারকেরা এখন পেঁয়াজ বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৩৬–৪০ টাকায়। আমদানিকারকদের কাছ থেকে নিয়ে আড়তদারেরা তা বিক্রি করছেন ৪০–৫০ টাকায়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এর পরদিন থেকেই পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিকল্প দেশগুলোর অনুমতি নিতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে এই অনুমতি নেন তাঁরা।
উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের হিসাবে, এবারে এখন পর্যন্ত ১৮টি দেশ থেকে ৪ লাখ ৭২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে মিসর, পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন, মিয়ানমার ও নেদারল্যান্ডস থেকে। এই ছয় দেশ থেকে মোট আমদানির ৯৫ শতাংশ আসছে। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ড, আলজেরিয়া, ইউক্রেন, মালয়েশিয়া ও ইরাক থেকেও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে অনুমতি নেওয়ার পর ব্যাংকে ঋণপত্র খুলে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর থেকে গড়ে প্রতিদিন আট হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হচ্ছে। এলসি খোলার পর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে দেশভেদে সময় লাগছে ২৫–৪৫ দিন।