হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি স্থাপন করবে সরকার

admin
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০ ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। এটা মূলত নিউক্লিয়ার মেডিসিনের ওপর গবেষণায় অত্যন্ত সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এতে দেশের নিউক্লিয়ার মেডিসিনের গবেষণা ও রেডিওলজিক্যাল বিভাগের কার্যক্রম আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে, যা উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করবে। বর্তমানে দেশে ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি রয়েছে, যা ১৯৮৬ সালে স্থাপন করা হয়। কিন্তু এটা খুবই ছোট ও নিম্ন ক্ষমতাসম্পন্ন, যা একই সঙ্গে চিকিৎসাব্যবস্থা চালানো, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষার জন্য অপ্রতুল। এতে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার কার্যক্রম যেমন বাধাগ্রস্ত হয়, তেমনি শিক্ষার্থী বা চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের গবেষণা কাজেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি স্থাপন করা গেলে নিউক্লিয়ার মেডিসিন-

গবেষণাসহ পুরো চিকিৎসাব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। এজন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি স্থাপনের কাজে হাত দিয়েছে সরকার। সূত্র জানান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটা বাস্তবায়ন করা হবে। পরে পরিচালিত হবে পরমাণু শক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে। ২৫ আগস্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি স্থাপনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। চলতি বছরের মধ্যে এর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা হবে। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে। তবে সম্ভাব্য এ প্রকল্পটির কাজ মূলত ২০১৮ সালেই শুরু হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে এর কাজ এগোয়নি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

ইয়াফেস ওসমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হলো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা। কিন্তু কভিডের কারণে এখন সেটা অনেকটাই পিছিয়ে যাচ্ছে। যদিও চলতি বাজেটে ৪৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে কিন্তু কোনো অর্থ এখনো অবমুক্ত হয়নি। ফলে এ বছর কাজটা কতটা এগোতে পারবে তা বলা খুব মুশকিল। তবে এ প্রকল্পটা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি স্থাপন করতে পারলে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে। অনেক কঠিন রোগ বা রোগতত্ত্বের গবেষণা দেশেই করা সম্ভব হবে। ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’

সূত্র জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৯৬ কোটি টাকা চলতি ২০২০-২১ বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পটির ব্যয় হবে আরও অনেক বেশি। আবার সময় বাড়ার কারণেও হয়তো ব্যয় আরও বাড়বে। এটির জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে সাভারে।এ গবেষণা চুল্লির কাজ হবে দেশের নিউক্লিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সহায়তা প্রদান। এর মধ্যে রয়েছে রেডিও আইসোটোপ ?উৎপাদন ও গবেষণা কার্যক্রম (যেমন নিউট্রন অ্যাকটিভেশন অ্যানালাইসিস, নিউট্রন স্ক্যাটারিং, নিউট্রন রেডিওগ্রাফি ইত্যাদি); নিউক্লিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি। বর্তমানে দেশে একটি ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রিগা মার্ক-২ গবেষণা রিঅ্যাক্টর রয়েছে, যা আশির দশকের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল অ্যাটমিকস কোম্পানির কাছ থেকে কিনে সাভারে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়। এটি দেশের একমাত্র পারমাণবিক চুল্লি এবং অন্যতম স্থাপনা। গবেষণা রিঅ্যাক্টরটি রেডিও আইসোটোপ উৎপাদন, বিভিন্ন গবেষণা ও ?উন্নয়ন কার্যক্রম যেমন নিউট্রন অ্যাকটিভেশন অ্যানালাইসিস, নিউট্রন রেডিওগ্রাফি, নিউট্রন স্ক্যাটারিং, শিক্ষা ও জনবল প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশের একমাত্র পারমাণবিক চুল্লিটি ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক শিক্ষা-কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি স্থাপন করা গেলে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার দ্রুত প্রসার ঘটবে বলে মনে করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।