২০ বছর পর মুক্তি মিলেছে শেখ জাহিদের

admin
আগস্ট ৩১, ২০২০ ৫:৫৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শেখ জাহিদ (৫০) স্ত্রী ও শিশু সন্তান হত্যার মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তারপর জীবনের দীর্ঘ ২০টি বছর কেটে গেছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। অবশেষে কারাগারের সেই কনডেম সেল থেকে মুক্তি পেয়ে পৃথিবীর মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিলেন তিনি। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে শেখ জাহিদ খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে তাই চোখের পানি আর আটকাতে পারেননি। এ সময় তার স্বজনরাও তাকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

সোমবার দুপুরে শেখ জাহিদের মুক্তির নির্দেশনা বাগেরহাট আদালত থেকে খুলনা জেলা কারাগারে এসে পৌঁছালে তার মুক্তি দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। সন্ধ্যায় শেখ জাহিদকে মুক্তি দেয়া হয় বলে জানান খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, স্ত্রী ও দেড় বছরের শিশু কন্যা হত্যাকাণ্ডের দায়ে ২০০০ সালের ২৫ জুন মৃত্যুদণ্ড হয় যুবক জাহিদ শেখের। তারপর থেকেই তিনি কারাগারের কনডেম সেলে টানা ২০ বছর ধরে মৃত্যুর প্রহর গুণছিলেন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত শেখ জাহিদকে ২৫ আগস্ট খালাসের রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্ট থেকে দণ্ড ঘোষিত বাগেরহাট আদালতে তার খালাসের নির্দেশ প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে ওই নির্দেশনা সোমবার খুলনা কারাগারে এসে পৌঁছানোর পরই তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

এদিকে দীর্ঘ ২০ বছর পর শেখ জাহিদের মুক্তির খবরে তার স্বজনরা আগে থেকেই জেলা কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার চাচা শেখ আশরাফুজ্জামান, ভগ্নিপতি আজিজুর রহমান ও আব্দুস সালাম এবং তার ছোট বোন।

মুক্তি পাওয়ার পর শেখ জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কখনও ভাবিনি যে ছাড়া পাব। আমি নির্দোষ ছিলাম। কারাগারে ২০ বছর অনেক কষ্টে কেটেছে।’ তিনি জানান, তার স্ত্রীর পূর্বের স্বামী এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলো বলে তার ধারণা। তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি তাকে এই মামলায় ফাঁসিয়েছে।

জেল ফটকে শেখ জাহিদকে নিতে আসা তার ভগ্নিপতি আজিজুর রহমান বলেন, ‘মামলার সময় তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল। টাকা দিতে না পারায় সব জেনেও তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। বিনা অপরাধে ২০ বছর কারাগারে কাটালো জাহিদ।

জাহিদ শেখের চাচা আকরাম হোসেন শেখ আক্ষেপ করে বলেন, জাহিদের ২০ বছরের জীবন ফেরত দেবে কে? কে দেবে তার জবাব? তিনি জানান, জাহিদ জেলে থাকা অবস্থায় তার বাবা ইলিয়াস শেখ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং মা হামিদা বেগম বিভিন্ন রোগে শোকে ভুগে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সুষ্ঠু তদন্ত করে যারা জাহিদের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। মুক্তি পাওয়ার পর তাকে খুলনা মহানগরীর মিয়াপাড়া এলাকায় তার বোনের বাসায় নেয়া হয়।

১৯৯৪ সালে বাগেরহাটের ফকিরহাট থানার উত্তর পাড়ার ময়েন উদ্দিনের মেয়ে রহিমার সঙ্গে খুলনার রূপসা উপজেলার নারিকেলি চাঁদপুরের জাহিদ শেখের বিয়ে হয়। জাহিদ শেখ শ্বশুর বাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন। পরে তাদের সংসারে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় রেশমা খাতুন। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের তিন মাস আগে রহিমার বাবার বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি পাকা ঘরে বসবাস শুরু করে ওই দম্পতি। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে রহিমার মা আনজিরা বেগম মেয়ের বাড়ির দরজা ভেজানো অবস্থায় দেখতে পান। তিনি বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকে খাটের ওপর কাঁথা ও লেপের নিচে বাচ্চাসহ রহিমার লাশ পান।

ওই ঘটনায় রহিমার বাবা ময়েন উদ্দিন বাদি হয়ে পরদিন ফকিরহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১৯৯৮ সালের ১৯ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তার আগে ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন জাহিদ। হত্যাকাণ্ডের তিন বছরের মাথায় ২০০০ সালের ২৫ জুন বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ আদালত শেখ জাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন।