বছরে চাহিদা সাড়ে ৩ লাখ টন, উৎপাদন সাড়ে ৬ হাজার
দেশে প্রথমবারের মতো প্রোটিনজাতীয় খাদ্যের অন্যতম কাসাভা চাষের (কন্দাল জাতীয় ফসল বা আলু, যা দেশে শিমুল আলু নামে পরিচিত) উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। বর্তমানে দেশে কাসাভার চাহিদা রয়েছে বছরে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন, তার বিপরীতে বেসরকারি শিল্প উদোক্তা বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ৬ হাজার মেট্রিক টন। বাকি পুরোটাই আমদানি করতে বছরে ব্যয় হয় কোটি কোটি টাকা। সে কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে অন্যান্য ফসলের সাথে কাসাভা চাষে কৃষকসহ স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে দেশজুড়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ, উদ্বুদ্ধকরণ প্রদর্শনী কার্যক্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও চাহিদা মিটিয়ে রফতানির জন্য কাসাভা চাষের ওপর জোর দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে দেশে সরকারি উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ২০২০ সালের মার্চ/এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজরের ৩৪টি উপজেলায় ২০ শতক করে জমিতে ৩০০টি কাসাভার প্রদর্শনী কেন্দ্র করা হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে আটটি প্রদর্শনী করা হয়েছে।
সরেজমিনে গতকাল দুপুরে পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও গ্রামে কৃষক সোহাফ উদ্দিনের কাসাভা প্রদর্শনী প্লটে গিয়ে ফসলটির আবাদ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রথম কাসাভা চাষ করে সোহাফও কৌতূহলী হয়ে পড়েছেন। এ সময় ওই ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরওয়ার উদ্দিন বলেন, উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে পটিয়ায় প্রথম বারের মতো কাসাভা চাষে বেশ উৎসাহ দেখা গেছে চাষিদের মধ্যে। উপজেলা কৃষি অফিসার কল্পনা রহমান বলেন, পটিয়ায় হাইদগাও কাশিয়াইশ ও কেলিশহরে কাসাভার তিনটি প্রদর্শনী করা হয়েছে। এ দিকে বোয়ালখালীর কৃষি অফিসার আতিক উল্লাহ বলেন, এই প্রথমবারের মতো উপজেলার জৈষ্টপুরার পাহাড়ি অঞ্চলে ২০ শতক করে পাঁচটি কাসাভার প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে।
জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ২০১৯ সাল থেকে কন্দাল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। যার মধ্যে বিআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত জাতের গোলআলু, মিস্টিআলু, ওলকচু, মুখিকচু, পানিকচু, লতিকচু, গাছআলু ও কাসাভা অন্যতম। ইতোমধ্যে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত উন্নত মানের ওলকচু মুখিকচু ও লতিকচু বিদেশে রফতানি শুরু হয়েছে। এ বছর থেকে মিস্টি আলুও রফতানির প্রক্রিয়া চলছে বলে নিশ্চিত করেন ওই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মখলেছুর রহমান।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রধান খাদ্য হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে কাসাভার ব্যাপক চাষ করা হয়। আমাদের দেশেও প্রাণ-আরএফএল প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে দেশে কাসাভা চাষ শুরু করে। তারা কয়েকটি জেলাতে কৃষকদের আর্থিকসহ নানা উপকরণ দিয়ে কাসাভা চাষে উদ্বুদ্ধ করছে এবং উৎপাদিত কাসাভা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে। প্রাণ আরএফএল কাসাভা থেকে স্টার্চ ও গ্লুকোচ উৎপাদন করতে হবিগঞ্জে দু’টি প্লান্ট স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
কাসাভা হচ্ছে এক ধরনের শিকড়জাত আলু, যা সাধারণত পাহাড়ি, অনাবাদি ও অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে চাষ হয়। দেশে এটি শিমুল আলু নামে পরিচিত। তার কারণ এর পাতা অনেকটা শিমুলের মতো। তাই দেশে অনেকে একে শিমুল আলু বলে থাকে। কাসাভা থেকে উন্নত মানের স্টার্চ পাওয়া যায়, যা দিয়ে গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাঁপড়, চিপসসহ নানা খাদ্য তৈরি করা হয়। বস্ত্র ও ওষুধ শিল্পে ব্যাপকভাবে কাসাভার স্টার্চ ব্যবহৃত হয়। কাসাভার স্টার্চ দিয়ে অ্যানিমেল ফিড বা পশুখাদ্যও তৈরি করা যায়। এ ছাড়া কাসাভার অব্যবহৃত অংশ দিয়ে জৈবসার উৎপাদন করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মখলেছুর রহমান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে পাহাড়ি অনাবাদি জমিতে অল্প খরচে কাসাভা চাষ করা যায়। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সে কারণে দেশে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাসাভা চাষের পরিধি বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, কাসাভায় শর্করার পরিমাণ শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ, এ ছাড়া প্রতি ১০০ কেজি কাসাভা থেকে ২৭ থেকে ৩০ কেজি উন্নতমানের স্টার্চ পাওয়া যায়।