রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার বনাঞ্চল হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা

Shakil Shahriar
মে ১৬, ২০২৪ ১১:১০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল পর্যায়ক্রমে কমানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাপান, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। শুধু ২০২৩ সালেই জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে ৩০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল ঘাটতি হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে দেড় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার খাদ্য, নিরাপদ পানীয় জল, আশ্রয়, সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো ব্যাহত হবে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক এই দাতাদেশগুলো। ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জ্বালানি উৎস হিসেবে বনাঞ্চল উজার হবে। এতে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে মঙ্গলবার (১৫ মে ) এক যৌথ বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।  এতে বলা হয় বলা হয়, সরকারি দাতাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা ও জীবন রক্ষায় টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে গত সাত বছর ধরে সংকট চলছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তহবিল নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে, যদিও এই দুর্বল জনগোষ্ঠীর নানারকম চাহিদা অব্যাহত রয়েছে। তহবিলের এই হ্রাসের ফলে খাবারের রেশন হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি এবং শোষণের ঝুঁকি বৃদ্ধিসহ সহায়তা প্যাকেজগুলোতে উদ্বেগজনক সমন্বয় ঘটেছে।

বিবৃতিতে পাঁচটি দেশ উল্লেখ করে, ১০ লাখ শরণার্থীকে উদারভাবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের আত্মনিবেদনের আমরা প্রশংসা করি। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠী যাতে তাদের প্রাপ্য সহায়তা ও সুরক্ষা পায় তা নিশ্চিত করতে আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমাদের পরিদর্শনকালে যেমনটি আমরা লক্ষ্য করেছি, রোহিঙ্গারা মানবিক সম্পদ কমে যাওয়ার ধকল বহন করছে এবং অগ্নিকাণ্ড ও বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শিগগিরই প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হবে। আমরা চাইলে এই ঝুঁকি কমাতে পারি।

উপরন্তু, তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের পরিবর্তে, প্রায় এক লাখ পরিবার তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করবে, যার ফলে এই অঞ্চলে মাসিক ১৪ হাজার টন জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা হবে আর এতে বন উজাড় এবং নেতিবাচক পরিবেশগত প্রভাব পড়বে।

আরও টেকসই মানবিক প্রতিক্রিয়ায় অবদান রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান ২০২৪-এ সমর্থন করতে হবে, যার লক্ষ্য রোহিঙ্গা শরণার্থী ও ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশিসহ ১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন মানুষকে সহায়তায় ৮৫২ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা। অর্থাৎ মাথাপিছু ৬৩০ মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং সেখানে অবস্থানরত প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার বাংলাদেশির কাছে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের স্বনির্ভরতা এবং জীবিকার সুযোগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা, তাদের সম্পূর্ণ সহায়তা নির্ভরতা কমিয়ে আনার জন্য, তাদের এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়,  আমরা বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গাদের সমর্থনে আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা আমাদের মানবিক অংশীদারদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছি, যারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সামনের সারিতে রয়েছে। আমরা অন্যান্য সরকার ও অংশীদারদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে এবং সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় তহবিল ও সহায়তা প্রদানে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

কক্সবাজার সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া জাপান ইতোমধ্যে ২৬ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছে এবং নরওয়ে ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ক্রোনার অনুদান ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য ২০২৪ সালের যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার জন্য রাজনৈতিক সমর্থন প্রকাশ করেছে।

২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে মায়ানমার সীমান্ত এলাকা রাখাইনে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। বিপুল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে বসবাসের অনুপযোগী পাহাড়ী জায়গায় আশ্রয় নেয়। বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া নানা খাদ্যসামগ্রী রান্না করার জন্য রোহিঙ্গা পরিবারগুলো লাকড়ির প্রয়োজন অনুভব করছিল যার ফলে গোটা এলাকায় লাকড়ির ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর তথ্যমতে, প্রায় ৭,০০০ হেক্টর বনাঞ্চল নষ্ট হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বনাঞ্চল উজার প্রসঙ্গে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, মানবতার কারণে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তাদের কারণে বন ধ্বংস হচ্ছে।