রিজার্ভের অর্থে প্রথম প্রকল্প চুক্তি পায়রা বন্দর ড্রেজিংয়ে

Shakil Shahriar
জুন ১৪, ২০২১ ১:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশের রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করে প্রথম বাস্তবায়ন করা হবে ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং’ প্রকল্প। এজন্য ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জেন ডি নুলের (জেডিএন) সঙ্গে। রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে রোববার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর হুমায়ুন কল্লোল এবং ড্রেজিং কোম্পানির পক্ষে প্রকল্প পরিচালক জ্যাং ওয়েল। ৩৪ মাসের জন্য এ চুক্তিটি করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন ভুইয়া। সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহণ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর হুমায়ুন কল্লোল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা বুভুক্ষু জাতি নই। আমাদের সম্পদ আছে, সম্পদের কোনো অভাব নেই। যেটার অভাব মাঝে মাঝে হয় সেটি হচ্ছে-সততা, দায়বদ্ধতা ও জাতির প্রতি দায়িত্বশীলতার অভাব। আমাদের মাটির দিকে তাকাতে হবে। নিজেদের নদীনালা, খালবিল, পাহাড়-সবই নিজেদের আয়ত্তে আনতে হবে। বহিরাগত চিন্তার দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রী পায়রা নামটি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর মতোই তার ক্ষিপ্রতা, সময়ের শক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের শক্তি কাজে লাগিয়ে বাঙালিকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছে সরকার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রিজার্ভের অর্থে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এটি ঐতিহাসিক বিষয়। প্রধানমন্ত্রী যে পেশার স্বাধীনতা দিয়েছেন, তারই একটি উদাহরণ হচ্ছে আজকের চুক্তি। এই বন্দরটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আমরা আগামী দিনে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাজ করে যাব। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বখ্যাত ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি নুলের সঙ্গে একটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তি করেছিলাম। যাতে বিদেশি অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী চুক্তির অর্থায়নের ধরন পরিবর্তন করে নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্পটি সম্পাদন করার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে জান ডি নুলের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান অনেক শক্তিশালী এবং প্রকল্পের অত্যাবশ্যকীয় অংশগুলো রেখে কার্যকরী নেগোসিয়েশনের ফলে প্রকল্পের ব্যয় কমে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি দাঁড়ায় অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হয়। তিনি বলেন নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর আস্থা অর্জনের জন্য দ্রুত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা।
ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সুষম উন্নয়নে এই বন্দর বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কাজটি দ্রুত শেষ করতে হবে। দেশের সম্পদ কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, সেটি দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পায়রা বন্দরের ড্রেজিংয়ে অর্থায়নের এই পুরো প্রক্রিয়াটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সবাই মিলে কাজ করায় প্রকল্পের কাজ ঠিক থাকলেও ব্যয় অনেক কমেছে। এটিও একটি উদাহরণ। যথাসময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ড্রিম চাইল্ড হচ্ছে এই প্রকল্প। অন্যের কাছ থেকে অর্থ নিলে সুদ বেশি দিতে হয়। অর্থছাড়ে জটিলতা থাকে, নানা শর্তও পালন করতে হয়। কিন্তু এখন আমরা নিজেদের অর্থেই বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। এতে জাতি হিসাবে আমাদের আস্থা, যোগ্যতা ও বিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। এই দিনটি ঐতিহাসিক। দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য কোনো দেশে এমন নজির নেই। প্রধানমন্ত্রীর এই ড্রিম চাইল্ড বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।
মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পরনির্ভরতা বাদ দিয়ে নিজেদের অর্থে নিজেদেরই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এটি অনেক আনন্দের। সবাই মিলে সফলভাবে কাজটি শেষ করতে হবে।
পায়রা বন্দরটি আন্দারমানিক নদীর তীরে রাবনাবাদ চ্যানেলে অবস্থিত। নিরবচ্ছিন্নভাবে জাহাজ চলাচলের জন্য বর্তমানে চ্যানেলে মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং চালু রয়েছে। চ্যানেলের গভীরতা ৬ দশমিক ৩ মিটার বজায় রাখা হচ্ছে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্দরে আরও বড় জাহাজ ভেড়ানোর জন্য এর আগে জান ডে নুলের সঙ্গে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তি হয়। রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত করা হবে। এতে বন্দরে ৪০ হাজার টন কার্গোবাহী এবং ৩ হাজার টিইইউ ধারণকারী জাহাজ বন্দরে সরাসরি ভিড়তে সক্ষম হবে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে দেশের উন্নয়নে ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড তৈরি করেছেন। ১৫ মার্চ তহবিলটির উদ্বোধন করেন তিনি। এই তহবিলের প্রথম গ্রাহক হিসাবে তিনি পায়রা বন্দরকে বেছে নিয়েছেন।