ঢাকা শুক্রবার | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘রাজনীতি করতে চাইলে জাতির কাছে ক্ষমা চান’

admin
মার্চ ১১, ২০২১ ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনা সভায় ‘বিএনপি কর্তৃক ইতিহাস বিকৃতি ও পরিকল্পিত মিথ্যাচারের প্রতিবাদে’ রাজধানীর শাহবাগে ‘গৌরব ৭১’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চাইলে ৭ মার্চ নিয়ে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ৷
বুধবার রাজধানীর শাহবাগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি এ দেশে রাজনীতি করতে চান তাহলে আপনাদের কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে মার্জনা ভিক্ষা করুন। জাতি হয়তো আপনাদের ক্ষমা করে দিতে পারে। ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যকে ক্ষমা করে দিয়েছে, আপনারা আর কয়জন হবেন? আপনাদেরও না হয় জাতি ক্ষমা করে দিল।’
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনা সভায় ‘বিএনপি কর্তৃক ইতিহাস বিকৃতি ও পরিকল্পিত মিথ্যাচারের প্রতিবাদে’ এ বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে ‘গৌরব ৭১’ নামের একটি সংগঠন।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম ৭ মার্চের ঐতিহাসিক দিবসটি পালন করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা করে দলটির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি।
সেখানে বিএনপির শীর্ষ নেতারা তাদের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব স্বীকার করলেও এটির উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচনা করেন। বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে ‘দর কষাকষির জন্য’ ভাষণ দিয়েছিলেন।
দলটির নেতারা আরও বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল না। তখনকার ছাত্রসমাজ ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য যে প্রত্যাশা করেছিল, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি সে ভাষণে। ভাষণটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ইতিহাস বিকৃতি করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদেই শাহবাগে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ‘গৌরব ৭১’।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ আরও বলেন, ‘ইয়াহিয়া খানের আলোচনার প্রস্তাবে যদি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেন “আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন”, তখন সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে পাকিস্তান সরকার এটিই প্রচার করবে যে, আমরা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেখ মুজিব সে সুযোগ দিল না। সে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা। সুতরাং তারা যে “অপারেশন সার্চ লাইট” করেছিল সেটি “বিচ্ছিন্নতাবাদী” নেতাকে দমন করার জন্য করা হয়েছিল বলে পাকিস্তান সরকার যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে পারত। বঙ্গবন্ধু তাদের সে সুযোগটিও দিলেন না।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে যারা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলে দিতে চায়, বঙ্গবন্ধুকে যারা স্বীকৃতি দেয়নি, তারা যখন ৭ মার্চ উদযাপন করার ঘোষণা দেয় তখন আমার কৌতূহল জাগে। নতুন প্রজন্মকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার জন্যই তারা ৭ মার্চ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এখন নতুন নতুন নেতা গজিয়ে উঠেছে মন্তব্য করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘৭১ সালে যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না তারা আজ পরিকল্পিতভাবে ইতিহাস বিকৃতি করছেন। আজ পুরো জাতি তাদের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
গৌরব ৭১-এর সাধারণ সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলা কমান্ডার জহিরুল ইসলাম জালাল ওরফে বিচ্চু, যুবনেতা ইকবাল মাহমুদ বাবলু, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ ঐক্যমঞ্চের সভাপতি রুহুল আমিন মজুমদার।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করে গৌরব ৭১-এর সভাপতি এস এম মনিরুল ইসলাম মনি।
সঞ্চালনায় এফ এম শাহিন বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি যদি তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার না করে তাহলে আমরা সারা দেশে লাগাতার কর্মসূচি দিতে বাধ্য থাকব। এ দেশে রাজনীতি করতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।’
যুবনেতা ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে যখন শুনি, মির্জা ফখরুল গংরা বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত করতে চান তখন আমাদের গা শিউরে উঠে। আমরা তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে এর দাঁতভাঙা জবাব দিব।’
পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা মনে করেছি ৭ মার্চ উদযাপন করে তারা নতুন উদ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিবে। কিন্তু তারা ষড়যন্ত্র করার কৌশল হিসেবে দিবসটি উদযাপন করেছে।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক সম্মেলন করে আপনাদের বক্তব্যের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান। এরপর এ দেশকে সমৃদ্ধিশালী করার যে সংগ্রাম, সে সংগ্রামে পেছনের দিক দিয়ে যুক্ত হয়েও অন্তত অংশীদার হোন৷’
সভাপতির বক্তব্যে মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ‘এই ফখরুল গংরা বাংলার মাটি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আলোচনায় আসার জন্য তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলছেন।’
বিএনপি অবিলম্বে ৭ মার্চ নিয়ে বক্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাইলে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মনি।