মেট্রোরেলে ৪৮.২৫ টাকায় উত্তরা থেকে মতিঝিল

admin
জানুয়ারি ১৩, ২০২১ ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

দেশের প্রথম মেট্রোরেলে ৪৮ টাকা ২৫ পয়সা ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪০ পয়সা ধরে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ভাড়ার এই হার প্রস্তাব করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। গত রবিবার মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণী বৈঠকে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেখানে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তথা ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল), বিআরটিএ, বিআরটিসি, ডিটিসিএ ও রেলসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে ডিটিসিএ ভবনে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে।
মেট্রোরেলটি (এমআরটি লাইন-৬) ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে উত্তরা-মতিঝিল ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দূরত্বের পুরো রুট ভ্রমণ করতে পারবে। এ রুটে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে একটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে অন্য কোচে নারী-পুরুষ একসঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ভাড়া নির্ধারণে কমিটি করে। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে সদস্য সাতজন। তাদের প্রতিবেদন দ্রুত জমা দিতে গত ১০ ডিসেম্বর আরেক দফা চিঠি দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার কমিটি বৈঠকে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি উত্থাপন করে। সেখানে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে মেট্রোরেল আইন, ২০১৫-এর ধারা ১৮(২) অনুযায়ী মেট্রোরেল পরিচালনার ব্যয় ও জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে ভাড়ার হার প্রস্তাব করা হয়।
মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারি অর্থ ও বৈদেশিক ঋণের মাসিক এবং দৈনিক খরচ, পরিচালন ব্যয়, কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন খাত পর্যালোচনা করা হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালন ব্যয় যোগ করলে প্রতি মাসে খরচ পড়বে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ২২৯ টাকা। দৈনিক হিসাবে এ খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫ হাজার ৭৪১ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের সঙ্গে ঋণের টাকার সুদ, গ্রেস পিরিয়ড, সরকারি অর্থ, পরিচালন ব্যয় সব কিছু পর্যালোচনা করে এই খরচ তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের হিসাবও নিরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দিনে ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে মেট্রোরেল। দৈনিক ব্যয় ও যাত্রী পরিবহন হিসাব করেই প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ধরা হয়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা। এই হিসাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ৪৮ টাকা ২৫ পয়সা আদায় করা হবে। আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রুট বর্ধিত হলে সেখানকার ভাড়ার পরিমাণ পরে যোগ হবে। এ অংশের কাজ নতুন করে করছে এমআরটি লাইন-৬ কর্তৃপক্ষ।
মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পে দৈনিক খরচ ধরা হয়েছে সরকারি উৎস থেকে ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ১৮৫ টাকা আর বৈদেশিক ঋণের অর্থ থেকে এক কোটি ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৮৫ টাকা। এ ছাড়া আছে প্রশাসনিক ব্যয়। বেতনভাতার হিসেবে দৈনিক খরচ ১৩ লাখ ৯ হাজার ৭১৭ টাকা। এর বাইরেও খরচ ধরতে হচ্ছে ৫ লাখ ১১ হাজার ৬৮৫ টাকা। এবার পরিচালন ব্যয় হিসাব করলে দেখা যায়, বেতনভাতায় দৈনিক খরচ হবে সাত লাখ ৯১৯ টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৬৭ হাজার ৯৫৮ টাকা। এর বাইরেও তিন লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৩ টাকা দৈনিক খরচ হতে পারে। তবে যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা ভাড়া দিয়ে মেট্রোরেলকে লাভজনক করা যাবে না, এমন বিবেচনায় ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট হাব ও স্টেশন প্লাজা গড়ে তোলা হবে।
২০২২ সালের জুনের মধ্যে মেট্রোরেল চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ প্রকল্পের সংশোধিত অ্যালাইনমেন্ট হচ্ছে- উত্তরা তৃতীয় পর্ব-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড-বাংলাদেশ ব্যাংক-জসিম উদ্দিন রোডের প্রথম অংশ হয়ে দক্ষিণ দিক দিয়ে সার্কুলার রোডসংলগ্ন কমলাপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকা। নতুন করে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার রুট বর্ধিত করায় স্টেশন একটি বেড়ে ১৭টি হচ্ছে।