যখন দেশ স্বাধীন হয় তখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় পাকিস্তানের প্রায় অর্ধেক ছিল। ধ্বংসস্তূপের ওপর যাত্রা শুরু করা দেশটি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায়। মাথাপিছু আয় পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যায়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৩ ডলার, সেটি ১৯৭৫ সালে হয় ২৭৮ ডলার।
মঙ্গলবার এক ওয়েবিনারে ‘মাথাপিছু আয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের যুগান্তকারী অর্জন: গবেষণার ফলাফল প্রকাশনা’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মসিউর রহমানের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, পিকেএসএফের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ, আইএমএফের সাবেক জিসিসি অঞ্চল প্রধান ড. আহসান এইচ মনসুর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড অ্যাক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক কমিশনার প্রফেসর হেলালুদ্দীন নিজামী এবং ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য নওশের রহমান।
বক্তারা বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছিল, তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব মেনে নিতে পারেনি। তাই স্বাধীনতার পরপরই নতুন নতুন চক্রান্ত শুরু হয়।
তারা বলেন, এই পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে সামনে নিয়ে যান। শুরুতে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি হচ্ছিল ও যে সম্ভাবনা রচিত হচ্ছিল, ষড়যন্ত্রকারীরা সেটি বুঝতে পেরেছিল। সেজন্য ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা আমাদের চার নেতাকে হত্যা করেছে।
অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে। তখন মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৯৩ ডলার। মাত্র তিন বছরে ১৯৭৫ সালে এসে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২৭৮ ডলার। চীনের চেয়ে সেটা ১০০ ডলার বেশি ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ ওই রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নীতির কারণে।’
ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন নেতৃত্বে আসেন তখন দেশের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিল্প-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমাসহ সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তখন তিনি খাদ্য-অন্ন-বস্ত্রহীন দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন নতুন দেশ গঠনের কার্যক্রম।
‘এক বছরের মধ্যে ব্যাংক-বিমা, পুলিশ, বিডিআর, আনসার, কোর্ট-কাচারিসহ সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে সুসংগঠিত করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জানতেন বাংলার মাটি ও মানুষ দিয়ে উন্নয়নের শ্রেষ্ঠতম আসনে যাওয়া সম্ভব।’
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘মাথাপিছু আয় বাড়লেই হবে না। সেটা ভোগের উপাদান তৈরি করতে হবে। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। এটা আকস্মিক বাড়েনি। বাংলাদেশ দিন দিন যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করছে, এই বৃদ্ধি তার প্রতিফলন।’
হেলালুদ্দীন নিজামী বলেন, ‘বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন অন্যতম। মানুষের মুক্তির জন্য তিনি রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছেন। ১৯৭২ সালে তিনি যখন সরকার গঠন করে তখন বৈরি পরিবেশ ছিল। মাত্র তিন বছরে মাথাপিছু আয় ৯৩ ডলার থেকে ২৭৩ ডলারে উন্নীত হয়।’
ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময়ে মাথাপিছু আয় অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি ছিল। তিনি কীভাবে অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেন, সেটাই মূল বিষয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সবকিছু ভঙ্গুর ছিল। সংবিধানের মূল ভিত্তি হলো মানুষ। বঙ্গবন্ধুর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শনের মূলে ছিল মানুষ। বঙ্গবন্ধু মানুষকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন দেশে মাত্র সাড়ে তিন বছর পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেই অসাধ্যকে সাধন করেছিলেন এই সাড়ে তিন বছরেই। বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি শক্ত ভিত নির্মাণ করেছেন। সেই ভিতের ওপর নির্ভর করে শুধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি না, সমগ্র বাংলাদেশ আজ পরিচালিত হচ্ছে।’