বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে এবং ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মান্ধ উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে ভাওয়াল অঞ্চল। গাজীপুরে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠন বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেন। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে শনি ও রবিবার মিছিলে মিছিলে উত্তাল ছিল গাজীপুর-টঙ্গির রাজপথ।
বিকেলে মহানগর যুবলীগ আহ্বায়ক কামরুল আহসান রাসেল সরকারের নেতৃত্বে নগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি। পরে জাগ্রত চৌরঙ্গী পাশে অনুষ্ঠিত সমাবেশে যুবলীগ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে কামরুল আহসান রাসেল সরকার বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি ভাস্কর্য নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র রুখে দিতে যুবলীগ প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে টঙ্গী থানা যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সেচ্ছাসেবকলীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মতিউর রহমান মতি।
ভাওয়ালবীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টারের পুত্র ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি’র আহবানে বিক্ষোভ করে গাজীপুর মহানগর ও টঙ্গী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার মত ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ যারাই করবে তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়ার শপথ নেন।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় ভাস্কর্যের মুখ ও হাতের অংশে ভাঙচুর করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এ ঘটনা ঘটল।
কুষ্টিয়া পৌরসভা সূত্র জানায়, শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতীয় ফুল শাপলার ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে মানুষের কাছে এটি ‘শাপলা চত্বর’ হিসেবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শাপলার ভাস্কর্য ভেঙে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেখানে নিচের দিকে জাতীয় চার নেতার ম্যুরালও থাকবে।
দরপত্রের মাধ্যমে যশোরের ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম এ নির্মাণের কার্যাদেশ পান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ১৭ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে মজমপুরের দিকে মুখ করে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার একটি ভাস্কর্য তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে ছিল। শুক্রবার রাতে এ ভাস্কর্যের বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলা হয়।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা গেছে রাত ২টার দিকে দুজন ব্যক্তি ভাস্কর্য ভাঙচুর করছেন। তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। অচিরেই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এ ধরনের নোংরা কাজ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন এবং মদদ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেককেই খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। যে বা যারা ভাঙচুর করেছেন তাদের কাউকে এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না।’
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর কালেক্টরেট চত্বরসহ জেলায় যতগুলো ভাস্কর্য আছে সবগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’