পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের খরচ অবিশ্বাস্য রকমের কমেছে। প্রথমে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় এর খরচ ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু ড্রেজিংয়ে ধরন পরিবর্তন করায় খরচ কমে ৪ হাজার ৯৫০ কোটিতে নেমেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদেশি অর্থায়নের পরিবর্তে রিজার্ভের টাকায় প্রকল্পটি নেয়ায় ও চুক্তির কিছু অসমতা দূর করায় এর খরচ কমেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এ খরচ কমিয়ে আনতে সক্ষম হন। বেলজিয়ামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জান ডি নুলের সঙ্গে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ রবিবার (১৩ জুন) দুপুরে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বিশেষ অতিথি ছিলেন। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল ও জান ডি নুলের প্রকল্প পরিচালক জান মোয়েন্স নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে পায়রা বন্দর আমাদের অর্থনীতির গতিধারাকে বদলে দিবে। নিজস্ব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে একটি দেশ কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে, বাংলাদেশ তার দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, আমাদের এখন শুধু পশ্চিমের দিকে তাকালে চলবে না। আমাদের পূর্ব দিকে তাকাতে হবে। দক্ষিণের দিকে তাকাতে হবে। যেখানে আমাদের পুকুর, ডোবা, জলাশয় রয়েছে। যেদিকে রয়েছে আমাদের বঙ্গপোসাগর। এসবের অপার সম্ভাবনাকে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা থেকে কাজে লাগাতে হবে। যেন জাতি হিসেবে আমরা স্বকীয়ভাবে এগিয়ে যেতে পারি।
প্রকল্প ব্যয় কমে যাওয়া প্রসঙ্গে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পায়রা বন্দরকে একটি পূর্ণাঙ্গ সমুদ্র বন্দরে রূপ দিতে রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা বাড়ানো প্রয়োজন ছিল।
এ জন্য ২০১৯ সালে একই কোম্পানির সঙ্গে পিপিপির আওতায় একটি চুক্তি করা হয়, বিদেশি অর্থায়নে যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কিছু দিক নির্দেশনা দেন, যাতে ড্রেজিং খরচ কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ জন্য তিনি দেশের রিজার্ভের টাকা ব্যবহার করতে বলেন। চুক্তিটির কিছু অসমতাও দৃষ্টিগোচর হয় এ সময়।
এ নিয়ে প্রধামন্ত্রীর মুখ্য সচিব, তথ্য সচিব ও নৌ সচিবের প্রচেষ্টায় ওই কোম্পানিকে আস্থায় নিয়ে নতুন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। যে কারণে আগের চুক্তির চাইতে খরচ অবিশ্বাস্য রকমের কমে যায়। ফলে এখন দেশের ৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তিনি বলেন, এতে আমাদের আমলাদের সক্ষমতা প্রমাণিত হল। এটিই প্রথম কোনো প্রকল্প যেখানে রিজার্ভের টাকা খরচ হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর দেশের তৃতীয় বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কয়লা আনার মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট বন্দরে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। এ পর্যন্ত মাত্র ১৩৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ এ বন্দরে ভিড়েছে। বন্দরটি আন্দারমানিক নদীর তীরে রাবনাবাদ চ্যানেলে অবস্থিত। নিয়মিত ড্রেজিং করে চ্যানেলটি সচল রাখা হলেও বড় জাহাজের জন্য আরো ড্রেজিং দরকার। বর্তমানে এর গভীরতা ৬ দশমিক ৩ মিটার।
চুক্তির আওতায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হলে ওই চ্যানেলে সাড়ে ১০ মিটার গভীরতা পাওয়া যাবে। বঙ্গপোসাগর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ চ্যানেলটি ১০০ থেকে ১২৫ মিটার প্রশস্ত করা হবে। এতে ৪০ হাজার টন পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে।