লঙ্কানদের দেয়া ছোট লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ারপ্লেতেই ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ উইকেটে বড় জুটি গড়ে শঙ্কার মেঘ কাটিয়ে দেন তাওহীদ হৃদয় এবং লিটন দাস। দ্রুত সময়ে এই দুই ব্যাটার আউট হলে আবারও চাপে পড়ে টাইগাররা। তবে সেই চাপ কাটিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে শনিবার (৮ জুন) শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভসূচনা করেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার দেয়া ১২৫ রান তাড়া করতে নেমে ১ ওভার হাতে রেখে জিতেছে টাইগাররা।
এই জয়ে ‘ডি’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে তিনে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। টাইগারদের সমান একটি করে জয় নিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নেদারল্যান্ডস। ১ ম্যাচ হেরে চারে নেপাল। দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরে তলানিতে শ্রীলঙ্কা।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে লেগ সাইডে শট খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য। দলীয় ১ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারে নুয়ান থুসারা বোল্ড করেন তানজিম তামিমকে।
৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দেখেশুনে খেলতে শুরু করেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত এবং লিটন দাস। দুজনে মিলে ২২ রানের জুটিও গড়েন। তবে ষষ্ঠ ওভারে থুসারার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। ১৩ বলে ৭ রান করে ফেরেন অধিনায়ক।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর লিটন এবং হৃদয়ের ব্যাটে চাপ সামলে ওঠে বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন লিটন এবং হৃদয়। বাংলাদেশ ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে পরপর ৩ বলে ৩ ছক্কা মেরে পরের বলে আউট হন হৃদয়। ৪ ছক্কা ও ১ চারে ২০ বলে ৪০ রান করেছেন হৃদয়।
হৃদয় যখন আউট হন, তখন ৫০ বলে ৩৪ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। উইকেটও ছিল ৬টি। কিন্তু দ্রুত সময়ে কয়েকটি উইকেট হারিয়ে এই সহজ লক্ষ্যটাকেও অনেক কঠিন বানিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
হৃদয়ের বিদায়ের পরের ৩ ওভারে কেবল ৮ রান করে বাংলাদেশ, সঙ্গে লিটন দাসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও হারায়। ৩৮ বলে ৩৬ রান করে হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ হন লিটন।
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দায়িত্ব নিতে পারেননি অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান। ১৪ বলে ৮ রান করে তিনি আউট হলে আবারও হারের শঙ্কা ভর করে বাংলাদেশের ওপর। পরের ওভারে তো বাংলাদেশ শিবিরে রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছেন থুসারা। বাংলাদেশ ইনিংসের ১৮তম ওভারে পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। জয় থেকে তখনও ১১ রান দূরে বাংলাদেশ।
দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে শেষমেশ দলের জয় নিশ্চিত করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চাপের মুখে ১৩ বলে ১৬ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।
এর আগে বোলিংয়ে নেমে প্রথম দুই ওভারে কোনো উইকেটের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন তাসকিন আহমেদ। কুশল মেন্ডিসকে বোল্ড করে ফেরান তিনি।
কুশল আউট হলেও রানের চাকা ভালোভাবেই সচল রেখেছিল শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে সাকিবের বলে ১৬ রান নেয় লঙ্কানরা। ৫ ওভার শেষে দলটির সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৮ রান।
সবকিছু ভালোই চলছিল লঙ্কানদের, এমন সময় বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। মিড অফে কামিন্দু মেন্ডিসকে তানজিম সাকিবের ক্যাচ বানান তারকা এই পেসার। পাওয়ারপ্লে থেকে ৫৩ রান আসে শ্রীলঙ্কার।
পাওয়ারপ্লের পর রানের গতি কমে। তবে লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে একাই এগিয়ে রাখছিলেন পাথুম নিসাঙ্কা। নবম ওভারে বোলিংয়ে এসে তাকে আউট করেন মুস্তাফিজ। ২৮ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ রান করেন নিসাঙ্কা।
মিডল ওভারে রানের গতি কমিয়ে আনে বাংলাদেশ। নবম ওভার থেকে ১৪ ওভার পর্যন্ত ৫ ওভারে কেবল ৩০ রান নেয় লঙ্কানরা। রানের চাপে পড়ে ভুল শট খেলা শুরু করে দলটি। ১৫তম ওভারে রিশাদ হোসেন পরপর দুই বলে আউট করেন দুই লঙ্কান ব্যাটারকে।
ওভারের প্রথম বলে চারিথ আসালঙ্কাকে সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান রিশাদ। ২১ বলে ১৯ রান করেছেন আসালঙ্কা। পরের বলেই আউট হন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। রিশাদের লেগস্পিন বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হাসারাঙ্গা।
দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর আরও ব্যাকফুটে চলে যায় শ্রীলঙ্কা। সুযোগটা লুফে নেন রিশাদ। নিজের পরের ওভারে আউট করেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে। ২৬ বলে ২১ রান করেছেন তিনি।
এরপর কেউই ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি। অসাধারণ ডেথ ওভার বোলিং করেছেন তাসকিন-মুস্তাফিজরা। নিয়মিত উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে আটকে দিয়েছেন ১২৪ রানে। একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। কিন্তু ১৯ বলে ১৬ রান করে শেষ ওভারে আউট হন তিনি।
৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। রিশাদও সমান ৩টি উইকেট নিয়েছেন ২২ রান দিয়ে। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন।