নিজস্ব প্রতিবেদক
এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই সুযোগ রাখা হয়। তবে এর সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব। ‘বড়শিতে আধার গেঁথে মাছ শিকারের’ সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ফখরুলের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, খালেদা জিয়াও কালো টাকা সাদা করেছেন, তিনি কি দুর্বৃত্ত?
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থবিলে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট পরিমাণে ওই কর পরিশোধ করে তাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ ট্যাক্স রিটার্নে সংযুক্ত করে তাহলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কেউই কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না। আগামী ১ জুলাই ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ এর মধ্যে এই সুযোগ নিতে পারবেন কালো টাকার মালিকেরা। অর্থ বিলে বলা হয়েছে, “নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সিকিউরিটিজ, আর্থিক স্কিম ও ইন্সট্রুমেন্ট এবং সকল প্রকার ডিপোজিট বা সেভিং ডিপোজিট ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ট্যাক্স রিটার্নে প্রদর্শন করা যাবে।
এবিষয়ে ব্যাখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কালো টাকা সাদা করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা প্রশ্ন আসছে, কালো টাকা নিয়ে। কালো টাকা নিয়ে আমি শুনি, কালো টাকা সাদা করলে আর কেউ ট্যাক্স দেবে না। ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালো টাকা নয়। জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যার আছে সেই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসেব, সেই হিসেবে কেউ জমি বিক্রি করে না। বেশি দামে বিক্রি করে, এতে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকাটা তারা নিজেদের কাছেই রাখে। এবার আমরা চেয়েছি এমন ব্যবস্থা করতে যাতে করে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তারা যেন সেটা আসল পথে নিয়ে আসে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলি মাছ ধরতে গেলে তো আদার দিতে হয়, দিতে হয় না? আদার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সেই রকম একটা ব্যবস্থা, এমনটা আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু হয়েছিল, আর পরেও প্রত্যেক সরকারই করেছে। সেই সুযোগটা আমরাও দিয়েছি। এটা নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলছে। তারপরেও মানুষের প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য সে সবের টেক্স কমিয়ে দিয়েছি।’
এরপরই রে রে করে ওঠে বিরোধী দলগুলো। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এটা (বড়শিতে আধার গেঁথে মাছ শিকার) হাস্যকর কথা। আমরা তো দেখলাম যে, আপনারা ওই মাছের টোপ দিয়ে যাদেরকে ধরেন তারা ….আপনারা নিজেরাই তো এর সঙ্গে (দুর্নীতি) সাথে জড়িত। বাজেট দেখলেই বুঝতে পারবেন যে, ‘রাঘব বোয়ালদের’ খাবারের আরেক ব্যবস্থা করেছে। প্রত্যেক বছর একই ঘটনা ঘটছে এবং এর মধ্যে যারা অর্থনৈতিক বিশ্লেষক, তারা বলছেন, এটা (অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করা) শুধুমাত্র ক্ষতি ছাড়া আর কিছু করবে না।” শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ফখরুলের মন্তব্যের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়াও কালো টাকা সাদা করেছেন, তিনি কি দুর্বৃত্ত?” তিনি বলেন, ‘বাজেটটা করা হয়েছে রাঘব-বোয়ালদের লুটপাট বন্ধ করার জন্য। বিএনপি আমলে যে লুটপাটের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছিল, দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল, তা থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লুটপাট করে কেউ এখানে পার পাবে না। নিজের লোকদের শায়েস্তা করার সাহস বিএনপি নেই।’রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় জমি কেনাবেচাসহ নানা কারণে বৈধ আয়ও অপ্রদর্শিত থেকে যায়। তাই এ সুযোগ দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত। তবে অপ্রদর্শিত আয়ের পরিমাণের ওপর স্বাভাবিক নিয়মে করহার প্রযোজ্য হওয়া উচিত। সেটি ১০ শতাংশ হতে পারে আবার ৩০ শতাংশও হতে পারে।
এই সুযোগ দেওয়ার খুশি আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব নেতারা। তাঁরা বলছেন, বিনা প্রশ্নে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত রোববার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান।