নিজস্ব প্রতিবেদক
এখন থেকে পোশাক শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পড়লে সেটি ‘শিল্প দুর্ঘটনা’ হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশে এর আগে এই নিয়ম শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমান নিয়মের কারণে এধরনের দুর্ঘটনার শিকার পোশাক শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) পাইলটের গভর্নেন্স বোর্ড গত ১৩ মে অনুষ্ঠিত তার ৮ম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ‘যাতায়াত দুর্ঘটনা’কে ‘শিল্প দুর্ঘটনা’ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন দিয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে এই সিদ্ধান্তের পাইলটিং কার্যকর হবে।
এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) পাইলটের গভর্নেন্স বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্তটি নিয়োগকর্তাদের সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন এবং সরকারী সংস্থাগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিল।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বাংলাদেশের শিল্প ও শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিল্প দুর্ঘটনার মধ্যে যাতায়াতকালের দুর্ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
সভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র কারিগরি বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের সম্প্রসারণের কারিগরি ও আর্থিক দিকগুলোর মূল পয়েন্টগুলো তুলে ধরেন। যাতায়াতকালীন দুর্ঘটনাকে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত উল্লেখ করা আছে- ঘটনা কারখানার বাইরে ঘটতে হবে, কারখানার সঙ্গে তাদের যুক্ততার রেকর্ড থাকতে হবে।
নিয়োগকর্তাদের সংগঠনগুলো পাইলট স্কিমের আওতায় আগামী ১ জুলাই থেকে যাতায়াত দুর্ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সামাজিক সুরক্ষার জন্য শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারকে সমর্থন করি এবং নতুন সুবিধাগুলো বিবেচনা করতে পেরে খুশি হবো যদি সেটি শিল্পের প্রতিযোগিতাকে প্রভাবিত না করে।
এরইমধ্যে শ্রমিক প্রতিনিধিরাও এ উদ্যোগে সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তৈরি পোশাক খাত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ খাত, তবে সড়ক পথে যাতায়াত এই কাজের সবচেয়ে ভয়াবহ অংশ, তাই যাতায়াত দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণের অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
আইএলও এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি বেনিফিট কনভেনশন নং ১২১ (সি-১২১) -এর ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে সদস্য দেশগুলোকে শিল্প দুর্ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং যার মধ্যে একটি যাতায়াত দুর্ঘটনাকে শিল্প দুর্ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা হবে এমন শর্তগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০২২ সাল থেকে ইআইএস পাইলট তৈরি পোশাক খাতের আহত শ্রমিক ও মৃত শ্রমিকদের কর্মস্থলজনিত দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে আসছে। আইএলও’র বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিয়াইনেন বলেন, যাতায়াত দুর্ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে এই উদ্যোগটি শ্রমিকদের সুরক্ষা বৃদ্ধি করবে এবং শিল্প সম্পর্কের উন্নতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইএলও এবং জিআইজেড যৌথভাবে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম পাইলট বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার, নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। আইএলও উদ্যোগটি নেদারল্যান্ডস এবং কানাডা সরকার দ্বারা অর্থায়ন করা হয়, অন্যদিকে জিআইজেড উদ্যোগটি জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড) দ্বারা অর্থায়ন করা হয়।
এদিকে গতকাল বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে তিন দিনে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে আইএলও কিছু পরামর্শ দিতে চায়, যাতে আইনটি আরও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়। সংস্থার কমিটি অব এক্সপার্ট আইনটা দেখেছে, পড়েছে, সেখানে তারা আন্তর্জাতিক মান নিয়ে কিছু সুপারিশ দিয়েছে।