নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিজ বাড়িতে এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হন। ১৯ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম উইন রোজারিও। নিহতের ঘটনার পরে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ছেলেটিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানায়। সম্প্রতি সেইদিনের ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের এবিসি৭। ভিডিওতে দেখা যায় কীভাবে বাড়িতে ঢুকে সরাসরি গুলি করা হয় ছেলেটিকে। তার মা এবং ভাইয়ের ‘ডোন্ট শ্যুট’ অনুরোধ উপেক্ষা করে সরাসরি গুলি করার এই ভিডিও দেখে স্তম্ভিত হয়েছে নেটদুনিয়া।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ তার বাসায় ঢুকে। তার মা তাকে আড়াল করার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ বন্দুক তাক করে রাখে। ছেলেটি একটি ছুরি নিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। মা ও ভাইয়ের সামনে তাকে হত্যা করা হয়। স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে নিউইয়র্কের ওজন পার্কের ১০১ এভিনিউয়ে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর পরে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯ বছর বয়সী এক তরুণকে নিউইয়র্কের কুইন্সে তার নিজ বাড়িতে পুলিশ কর্মকর্তারা গুলি করে হত্যা করেছে। নিহত ওই তরুণ মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং গুলিতে নিহত হওয়ার আগে সাহায্যের জন্য ৯১১ নম্বরে ফোন করেছিলেন।
পুলিশ জানায়, বাড়িতে পৌঁছে উইন রোজারিওকে কাঁচি হাতে দেখতে পান তারা। সম্প্রতি প্রকাশিত ভিডিওতে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। হত্যার দিন দাবি করা হয়, এক জোড়া কাঁচি নিয়ে পুলিশ অফিসারদের দিয়ে তেড়ে যান সেই যুবক এবং এরপরই একপর্যায়ে কর্মকর্তারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক হয়ে দারিয়েছিল বলছে পুলিশ। কিন্তু প্রচারিত ভিডিওতে তেমন কোন উত্তেজনাপূর্ণ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি।
তবে নিউইয়র্ক টাইমস ২৮ মার্চের প্রতিবেদনেই বলেছে, নিহত তরুণের ভাই এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং তিনি পুলিশি বিবরণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, তার মা তার ভাইকে আটকাচ্ছিলেন এবং তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পুলিশ অফিসারদের তাদের বন্দুক থেকে গুলি করার দরকার ছিল না। ভিডিওতে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের কথা শোনায় সেইখানে যখন এধরনের ঘটনা ঘটে এবং পুলিশি দাবি ও প্রকৃত ঘটনার মিল পাওয়া যায় না তখন আর তাদের মানবাধিকারের কথা শোনানোর কোন অধিকার থাকে না। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ঘটনা ঘটে সেগুলো আরও বেশি করে সামনে এলে তাদের দ্বিচারিতা ধরা পড়বে।
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও যে বিষয়গুলো দাবি করা হয় তাহলো, অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পর অফিসাররা রোজারিওকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি একটি ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে অফিসারদের দিকে ধেয়ে আসেন। পরে উভয় অফিসারই রোজারিওর ওপর টেজারের মাধ্যমে গুলি করেন এবং তাকে পরাস্ত করা হয়।জন চেল আরও বলেন, ‘কিন্তু তার মা ছেলেকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু এটি করতে গিয়ে তিনি ঘটনাক্রমে রোজারিওর শরীর থেকে টেজার সরিয়ে দেন। আর সেই সময়ে রোজারিও কাঁচি তুলে আবার অফিসারদের দিকে তেড়ে আসেন।’ চেল বলেন, ‘এই পরিস্থিতেতে আত্মরক্ষা করার জন্য তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’
এই পুরো ঘটনাটি পুলিশ অফিসারদের শরীরে লাগানো ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে বলে জানান চেল। যদিও ফুটেজটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। রোজারিওর ১৭ বছর বয়সী ভাই উশতো রোজারিও এক সাক্ষাৎকারে পুলিশের বিরোধিতা জানিয়ে বলেন, তার মা এনকাউন্টারের পুরো সময়জুড়ে তার ভাইকে তার কোলে ধরে রেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে গুলি করা ছিল অপ্রয়োজনীয়। আমি মনে করি না কেবল একটি কাঁচি দুজন পুলিশ অফিসারের জন্য হুমকি ছিল।‘
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নিউইয়র্কে গত দুই মাসে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন রোজারিও। এ ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাফেলো প্রবাসী এক বাংলাদেশি বলেন, এরকম ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তারা সাদা চামড়ার ব্যক্তির সঙ্গে যে আচরণ করে কালো বা ব্রাউন চামড়ার মানুষদের সাথে সেই আচরণ করেনা। মানবাধিকার বিষয়টি কেবল আমেরিকানদের জন্য, প্রবাসীদের জন্য না। তারা যেধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেন সেগুলো সামনে আসা জরুরি।