জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে সারা দেশের মানুষকে আরো সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা দিতে সারা দেশের সাত হাজার অ্যাম্বুল্যান্সের মালিক যুক্ত হয়েছেন এ সেবার সঙ্গে। এ ছাড়া এই জরুরি সেবায় যুক্ত হচ্ছেন পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, স্থানীয় সরকার, নৌপরিবহন, রেল পরিবহন, বেসামরিক বিমান পরিবহন সেবা প্রদানকারীরাও।
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-কে একটি ইউনিট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারের তরফ থেকে নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। যার নাম ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নীতিমালা ২০২০’। সিআইডি, ডিবি, পিবিআইসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মতো এটিও আলাদা একটি ইউনিটের মর্যাদা পাচ্ছে। এর প্রধান হবেন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
নতুন এই ইউনিটে পুলিশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যুক্ত হবেন বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জানিয়েছেন, এরই মধ্যে এ সেবায় ফায়ার সার্ভিস ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কাজ করছেন।
গত নভেম্বরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নীতিমালার খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিপরিষদ। ৩ জানুয়ারি নীতিমালার গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অথবা দুর্যোগে ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’-এর অপারেশন কার্যক্রম সচল রাখতে একটি ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার থাকবে। দুর্যোগে বা অন্য কোনো কারণে ৯৯৯ জরুরি সেবার মূল কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিকল্প কেন্দ্রের মাধ্যমে নাগরিকের জরুরি সেবা প্রদান অব্যাহত থাকবে।
আরো বলা হয়েছে, পাবলিক সেফটি অ্যানসারিং পয়েন্টগুলো (পিএসপি) তদারকি ও মনিটরিংয়ের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে।
অ্যানসারিং পয়েন্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় জরুরি সেবা ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো একটি থানার টহল টিম কাজ করছে। ৯৯৯ থেকে টহল টিমকে কল দেওয়া হলো। টহল টিম রেসপন্স করল। তারাও অ্যানসারিং পয়েন্ট।’
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘ইউনিটের প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। প্রয়োজনে দেশের যেকোনো স্থানে আঞ্চলিক অফিস স্থাপন করা যাবে। ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা হবেন ইউনিটের প্রধান। প্রতিষ্ঠানের জনবল পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে সরাসরি অথবা প্রেষণে পদায়ন করা হবে।’
টেলিফোন, মোবাইল ফোন, মোবাইল ফোন অ্যাপস এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যে কেউ ভয়েস, ভিডিও এবং বার্তার মাধ্যমে ৯৯৯ থেকে সেবা চাইতে পারবেন। প্রাপ্ত তথ্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত নিকটস্থ পিএসএপিতে জানানো হবে। কম্পিউটার সিস্টেমে আপডেট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জরুরি অ্যাম্বুল্যান্স সহায়তা চেয়ে কোনো কল বা বার্তা এলে স্বাস্থ্য ও অ্যাম্বুল্যান্স ডেসপাচারে তা গৃহীত হলে সেবা প্রার্থীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য কাছের অ্যাম্বুল্যান্সের পাবলিক সেফটি অ্যানসারিং পয়েন্টকে (পিএসএপি) অবিলম্বে অবগত কররে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কয়েকটি শর্তে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স এ সেবার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, ‘অ্যাম্বুল্যান্স যুক্ত করা হয়েছে। সারা দেশে সাত হাজারের মতো অ্যাম্বুল্যান্স মালিক যুক্ত হয়েছেন। কোনো রোগী বা কোনো সমস্যায় কেউ জরুরি সেবায় ফোন করলে কাছাকাছি থাকা অ্যাম্বুল্যান্সের মালিক চালককে জানানো হয়। তারা গিয়ে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।’
নীতিমালায় বলা হয়েছে, গ্যাস বিদ্যুৎ পানি সরবরাহ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, সড়ক পরিবহন, নৌপরিবহন, রেল পরিবহন, বেসামরিক বিমান পরিবহন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও পিএসএপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হবে।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় ৯৯৯ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ইমার্জেন্সি মনিটরিং সেন্টার থাকবে, যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ ও পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে জাতীয় দুর্যোগ কমিটিকে সহায়তা করা হবে। কোনো অবস্থাতেই জাতীয় জরুরি সেবায় মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান করা যাবে না। এ ধরনের কার্যক্রম প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।