• সাবেক এমপি হাবিবের ১০ বছর, যুবদল নেতা বাচ্চুর ৯ বছর কারাদণ্ড
• ৩৪ আসামি কারাগারে, পলাতক ১৬
মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের ১০ বছর ও সাবেক যুবদল নেতা আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ তিনজনের ৯ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি ৪৪ আসামিকে সর্বনিম্ন্ন ৪ বছর থেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হুমায়ুন কবির এ মামলায় মোট ৫০ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে এই সাজা প্রদান করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সকলেই বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ মামলায় জেলহাজতে থাকা সাবেক সাংসদ হাবিবসহ ৩৪ আসামিকে সকালে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে তাদের সামনে এ রায় ঘোষণা করা হয়। বাকি ১৬ আসামি পলাতক রয়েছে। দীর্ঘ ১৯ বছর পর এই মামলার রায় হলো।
এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন- সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আশরাফ হোসেন, সাবেক পৌর মেয়র আক্তারুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, আব্দুর রকিব মোল্ল্যা, আব্দুল মজিদ, হাসান আলী, ময়না, আব্দুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, জহুরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, এ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, রকিব, ট্রলি শহীদুল, মনিরুল ইসলাম, শেখ কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, দিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, আব্দুল গফফার গাজী, রিঙ্কু, এ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ ও টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন।
পলাতক আসামিরা হলেন- সাবেক যুবদল নেতা আব্দুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কণক, মাহাফুজুর রহমানসহ ১৬ জন। এদিকে এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোট চত্বরে আনন্দ মিছিল করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে রায় পরবর্তী জজকোর্ট চত্বরে উক্ত আনন্দ মিছিলে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন। আনন্দ মিছিলে নেতৃত্ব দেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের প্রতিবাদে ও এ রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেছে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ তারিকুল হাসানের নেতৃত্বে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জুডিসিয়াল কোর্ট চত্বর থেকে উক্ত বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা শহরের নিউমার্কেট চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখে মাগুরা ফিরে যাওয়ার পথে কলারোয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন। এতে শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও তার সফরসঙ্গী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, শহিদুল হক জীবন, আবদুল মতিনসহ অনেকেই আহত হন। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিকও হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় পরবর্তীতে তিনি নালিশী আদালত সাতক্ষীরায় মামলাটি করেন। পরবর্তীতে এ মামলা খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয় পুলিশ। গত ২৭ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে কাঠগড়ায় থাকা সাবেক সাংসদ হাবিবসহ ৩৪ জনকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। বাকি ১৬ আসামি পলাতক রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা ও সাতক্ষীরার পিপি এ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ।
অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট শাহানারা আক্তার বকুল, এ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ, এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান পিন্টু, এ্যাডভোকেট তোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ।