স্বাবলম্বী হচ্ছে নারী

admin
মার্চ ৮, ২০২১ ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

শরিফা শবনমের জীবনের গল্পটা একটু অন্য রকম। স্বামী আবীর হোসেন চাকরি করতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, বেতনও পেতেন বেশ ভালো। বেশ সুখের সংসারই ছিল তাদের। কিন্তু ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর তার জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুতে। দুই সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন তিনি। কী করবেন, কোথায় যাবেনÑ এসব ভাবতেই কেটে গেছে ৬ মাস। জীবনের ওপর দিয়ে বড় ঝড় বয়ে গেলেও দমে যাননি তিনি। টুকটাক বুটিকের কাজ জানতেন। চিন্তা করলেন এই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে যদি কিছু করা যায়। তিনি আর বসে থাকেননি, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের জয়িতা ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে মেয়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে দেন ‘স্নেহা বুটিক হাউন’। শুরুতে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হলেও শবনমকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি আজ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। নিজের মেধা-শ্রম দিয়ে নারী হয়েও তিনি আজ স্বাবলম্বী।
কেবল শরিফা শবনম নন, তার মতো লাখো নারী আজ সফল উদ্যোক্তার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া ও অবহেলিত নারী থেকে আজ তারা স্বাবলম্বী নারীতে পরিণত হয়েছেন। গড়ে তুলছেন শিল্প কারখানা, কর্মসংস্থান করছেন লাখ লাখ বেকারের। সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
এমন অসংখ্য জয়িতা এখন দেশের অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করে তুলছেন। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্পোদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। অবশ্য অধিকাংশ উদ্যোক্তাকেই প্রতিষ্ঠা পেতে হচ্ছে নানা বাধা অতিক্রম করে, পথের কাঁটা সরিয়ে।
এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট উদ্যোক্তার ৩১.৬ শতাংশই নারী। প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেই কাজ করে এ দেশের নারীরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছেন। জরিপের ফলাফলে উল্লেখ করা হয়েছে, উগান্ডায় নারী উদ্যোক্তা ৩৪.৮ শতাংশ, বাংলাদেশে ৩১.৬ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৩১.৪ শতাংশ। স্বল্প আয়ের অর্থনীতির দেশগুলোয় নারীরা ব্যবসার সুযোগ পেয়ে নয়, মূলত প্রয়োজনের তাগিদেই উদ্যোক্তা হন। তাই ব্যবসার যে কোনো ধরনের সুযোগ পেলেই এসব নারী সেটি কাজে লাগান।
উইমেন এন্টারপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল বলেন, নারীর উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে এক সময় বড় বাধা ছিল পারিবারিক ও সামাজিক বাধা। শুরুতেই বাধা আসত পরিবার থেকে। একজন মেয়ে হয়ে ব্যবসা করবেÑ এটা পরিবারের কোনো সদস্যই মেনে নিতে পারত না। তা ছাড়া সমাজও ভালো চোখে দেখত না।