- অসৎ ব্যবসায়ীদের কোন ছাড় নয়, নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা
- আমদানি কার্যক্রমে সহযোগিতা দেবে সরকার
- উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ
- সারা বছর ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চিন্তাভাবনা
- এম শাহজাহান ॥ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে অস্বস্তিতে সরকার। গত কয়েকদিনে পেঁয়াজ, আলু, সবজিসহ প্রায় সব পণ্যেরই মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য পাঁচটি মন্ত্রণালয় একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী আশা করছেন, এইসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে শীঘ্রই নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে।
- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রচলিত যেসব আইন ও বিধি-বিধান রয়েছে তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। অসৎভাবে যদি কেউ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করেন তাকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া জোরদার করা হবে আমদানি কার্যক্রম। চাহিদা অনুযায়ী ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমদানি কার্যক্রমে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর এ বিস্তারিত পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি’র কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা হবে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে সারাবছর ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি ও শাক-সবজিসহ ১৭টি নিত্যপণ্য নিয়ে শীঘ্রই জরুরী বৈঠক করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণ সেল। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কোন একটি পণ্যের দাম বাড়লে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়। কোন মন্ত্রণালয় এককভাবে কোন পণ্যের দায় নিতে প্রস্তুত নয়। যেমন-চালের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়, ঠিক তেমিন শাক-সবজি, আলু ও পেঁয়াজের বিষয়টি দেখে থাকে কৃষি মন্ত্রণালয়। চিনির মতো পণ্যের দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজ, চাল ও চিনি আবার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেখার কথা। এ কারণে দ্রবমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাঁচ মন্ত্রণালয় একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী খাদ্য, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প এবং অর্থ মন্ত্রণালয় একটি অভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
- এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যসচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরগুলোর একটি সমন্বিত উদ্যোগ এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে এ ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পেঁয়াজের বিষয়টি দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন আমদানি বাড়িয়ে ও দেশীয় মজুদকৃত পেঁয়াজ বাজারে এনে দাম স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। এখন আর পেঁয়াজের দাম বাড়ছে না বরং কমে আসছে। আবার আলোচিত আলুর বিষয়টি আমাদের নয়, এটি দেখছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ঠিক তেমনি চালের দাম বাড়ল না কমল তা দেখছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। অথচ সবগুলো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে একটি সমন্বিত উদ্যোগ বড় প্রয়োজন।
- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন বিভাগ ॥ জানা গেছে, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এই মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পৃথক কোন বিভাগ নেই। আমদানি, রফতানি ও এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) বিভাগ রয়েছে মন্ত্রণালয়টিতে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অনুবিভাগ নামে নতুন একটি বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত এ ধরনের একটি অনুবিভাগ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমদানি শাখা নিত্যপণ্যের চাহিদা ও জোগানে ফারাক দেখলে ওই পণ্য আমদানি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে। এ মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণ সেল নামে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। সেখানে সর্বোচ্চ উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বছরে শুধু রোজার সময় বাজার মনিটরিংয়ে কিছু কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয় মন্ত্রণালয়, সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়ে বাজার স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। বাজার মনিটরিংয়ের কাজ দেয়া হয়। তারা বিভিন্ন বাজারে ঘোরেন, কেনা দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রির তথ্য পেলে জরিমানা করেন। জরিমানার কবল থেকে বাঁচতে তাদের আগমনের খবর শুনেই দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এভাবেই চলছে গত কয়েক বছর ধরে।
- ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর করেছে। ঢাকার বাইরে অধিদফতরের অফিস স্থাপন হচ্ছে। তবে অধিদফতরটি মূলত প্যাকেটজাত পণ্য বা নির্ধারিত খুচরা মূল্যের অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ পেলে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। ব্যবসায়ীরা প্যাকেটের গায়ে খুচরা মূল্য বাড়িয়ে লিখে বাজারে ছাড়লে এ অধিদফতরের করার কিছু থাকে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন পাস করে। এখন কমিশন গঠন হয়েছে।
- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পেঁয়াজ কিংবা খোলা তেলÑদুটোর মূল্যই নিয়ন্ত্রণের সহজ সুযোগ আছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে। মন্ত্রণালয় তা প্রয়োগের কথা ভাবেনি। বিদ্যমান অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন আইনে ১৭টি পণ্যের মিলগেট বা আমদানি পর্যায়, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেয়ার সুযোগ আছে। ১৯৮১ সালের আইনটি ওই সময় সংশোধন করে আরও কিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইনের ১৪ (ঘ) ধারা অনুযায়ী, সরকার চাইলে যেকোন সময় পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, চিনি ও খাবার লবণের মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার পরও তা কার্যকর হয় না। সম্প্রতি গোল আলুর ক্ষেত্রে বেধে দেয়া দাম কার্যকর হয়নি। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বলেন, সরকারের দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় না। ফলে প্রতিবছরই দেশে উৎপাদনের পরেও পেঁয়াজ ও চালের মতো আবশ্যিক খাদ্যশস্যের একটি বড় অংশ আমদানি করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারকে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে, প্রয়োজনে প্রতিটি খাদ্যশস্যের চাহিদা হিসাব করে গবেষণা এবং বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে সরকারকে আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনও আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা বলেছেন।
- শীঘ্রই জরুরী সমন্বয় বৈঠক ॥ জানা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শীঘ্রই জরুরী বৈঠক ডাকা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণ সেলের সভাপতি ও সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীনের উদ্যোগে এই সভা হবে। ওই সভায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর ও অধিদফতরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। দ্রুত পেঁয়াজ, চাল, আলু চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের দাম কমিয়ে আনতে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে।
- বর্তমান খুচরা বাজারে প্রতিকেজি স্বর্ণা ও চায়না ইরিখ্যাত মোটা চাল ৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা এবং চিকন চালের দামও বেশি। এ অবস্থায় চালের মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। অভিযান চালিয়ে মিল মালিকদের জরিমানা করা হলেও বাজারে দাম কমেনি। এর মধ্যে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে গরিবের খাবার আলু দাম। সহজলভ্য ও জনপ্রিয় সবজি হিসেবে আলুর কদর সব সময় ছিল। দেশে এমন কোন খাবার নেই যেখানে আলুর ব্যবহার হয় না। ভোক্তারা সারাবছর আলু ২৫-৩০ টাকার মধ্যে কিনতে পারলেও সেটাই এখন দ্বিগুণ দাম দিয়ে ৫৫-৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আলু এখন রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। কৃষি বিপণন অধিদফতর দাম নির্ধারণ করে দিয়েও তা কার্র্যকর করতে পারেনি। এ অবস্থায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ না হলে আলুর দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, নতুন আলু না উঠা পর্যন্ত সহসাই আলুর দাম কমবে বলে মনে হয় না। তবে এখন দেশে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আলু মজুদ আছে। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করা হলেও কৃষক, হিমাগার মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এছাড়া পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানি ও নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এখন সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে পেঁয়াজের দাম কমে আসছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। এছাড়া চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
- চালের আমদানি শুল্ক কমানো হতে পারে ॥ আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন ধান উঠা শুরু হবে। এরই মধ্যে যদি চালের দাম না কমে তবে আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করার কথা ভাবছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা এবং ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার স্বার্থে চাল আমদানি শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু মিলারদের কারসাজির কারণে বাড়ছে চালের দাম। প্রতিকেজি মোটা চাল এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নাজিরশাইল ও মিনিকেট খ্যাত চাল ৫৫-৬৫ এবং মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। চালের দাম কমাতে এখন সারাদেশে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ৫০ লাখ পরিবার ১০ কেজির চাল পাচ্ছেন।
- শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে ॥ বন্যা ও বৃষ্টির কারণে এ বছর সবজি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ শীতের সবজিতে ভরে উঠবে বাজার। ইতোমধ্যে বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। বাজারে এখন কোন সবজি ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শীতের মৌসুম শুরু হলেও দাম কমে আসবে। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সম্প্রতি জানিয়েছেন, এ বছর উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ জমিতে সবজির চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আগামী একমাসের মধ্যে নতুন সবজিতে ভরে উঠবে বাজার। এ কারণে শীঘ্রই সবজির দাম কমে আসবে। তিনি বলেন, শাক-সবজি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের আমদানি বাড়াতে সরকার স্বল্পসুদে ও সহজশর্তে ঋণ ব্যবস্থা প্রচলন করেছে। এছাড়া নগদ সহায়তা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। এসব সুবিধা এখন কৃষকরা পাচ্ছেন। এসব কারণে সব ধরনের সবজির উৎপাদন বাড়বে।
- ৩২ লাখ টন আলু মজুদ আছে ॥ প্রতিমাসে ৮ লাখ টনের মতো আলুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে দেশের প্রায় ৩৫০টি হিমাগারে আলু মজুদ আছে ৩২ লাখ টন। আগামী দু’মাসের মধ্যে বাজারে আসবে নতুন আলু। আর এ কারণে এখন আলু ছাড়া না হলে মজুদকারী ও হিমাগার মালিকরা লোকসান গুনবেন। আগামী দু’মাসের চাহিদা মিটিয়ে আরও ৮ লাখ টন আলু হিমাগারে থাকবে। করোনা মহামারীর কারণে এ বছর আলু রফতানি হচ্ছে না। এ কারণে আলুর কোন ঘাটতি নেই দেশে।
- ভোজ্যতল ও পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানো হচ্ছে ॥ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে ভোজ্যতেল আমদানি হয়। আর পেঁয়াজ আনা হচ্ছে বিশ্বের ১১ দেশ থেকে। সাড়ে ৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সরকারী উদ্যোগে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পামওয়েলের দাম নিম্নমুখী। এ কারণে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই। সম্প্রতি ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।
- টিসিবি’র কার্যক্রম সারাবছর চলবে ॥
- ভর্তুকি মূল্যে স্বল্প আয়ের মানুষকে নিত্যপণ্য দিতে টিসিবি’র কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সারাবছর যাতে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি পণ্যবিক্রি করতে পারে সে লক্ষ্যে টিসিবি’র মজুদ আরও তিনগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী রোজার মাসের পর থেকে সারাবছর টিসিবি’র কার্যক্রম চালু রাখা হতে পারে।
- নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজেটে ভর্তুকি ॥ করোনা সঙ্কটের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বাজেটে। চলতি বাজেটে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। স্বল্প আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে কম দামে নিত্যপণ্য সরবরাহের মতো চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে সরকার। খাদ্যপণ্য আমদানি, উৎপাদনে সহায়ক শুল্ক-কর, ভ্যাট নীতি অবলম্বন ও ভর্তুকি মূল্যে বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের মতো পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চিনি ও আটার মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানিতে সর্বোচ্চ রেয়াতি সুবিধা হয়েছে। এছাড়া খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি ও প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।