সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিজমিতে বিনামূল্যে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন গাজীপুরের ৭টি এলাকার কয়েকশ কৃষক। নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের এ ক্ষুদ্র সেচ কর্মসূচি আলো ছড়াচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে। তাদের মতে, এতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ অনেকে কমে আসার পাশাপাশি পরিবেশেরও সুরক্ষা হবে।
গাজীপুর বিএডিসি (সেচ) অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের সিংহভাগ কৃষকদের তাদের কৃষিজমিতে সেচ দিতে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন ও বিদ্যুৎচালিত মোটরের সাহায্য নিতে হয়। এতে কৃষিজমিতে উৎপাদন খরচ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন সেচের ভোগান্তি ও ভ‚গর্ভস্থ পানিরও অপচয় হয়। বর্তমান সরকার কৃষির উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ নামের একটি কর্মসূচি চালু করেন। এ কর্মসূচির অধীন গাজীপুরের শ্রীপুরের নান্দিয়াসাঙ্গুনে ২টি, ধামলই গ্রামে ২টি, কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকায় ১টি ও গাজীপুর সদরের পিরুজালী এলাকায় ২টি সোলার পাম্প সরকারি অর্থায়নে স্থাপন করে দেওয়া হয়। ইউরোপিয়ান যন্ত্রাংশে প্রতিটি সোলার পাম্প স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ২৩ লক্ষাধিক টাকা। গত অর্থবছরে স্থাপন করা এক কিউসেক পানি উৎপাদনে সক্ষম এসব পাম্পের মাধ্যমে গাজীপুরের ৭টি এলাকার দেড় শতাধিক কৃষক প্রায় অর্ধশত একর জমিতে বিনামূল্যে সেচ দিচ্ছেন। জ্বালানি খরচ না হওয়া, পানির অপচয়রোধ, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য এ সেচ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
নান্দিয়া সাঙ্গুন এলাকার কৃষক আবু নাছের বলেন, তাদের এলাকার কৃষিকাজে কৃষকদের সেচ নির্ভরতা ছিল ডিজেলচালিত মেশিনের ওপর। এতে ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে ১৫শ টাকা লাগত। সোলার পাম্প স্থাপন করায় এখন আর সে খরচটা লাগছে না। এতে নানা ধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে কৃষকদের, বিশেষ করে কৃষিপণ্য উৎপাদন খরচ কমেছে। লাভবান হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা এতে প্রতিনিয়ত আগ্রহী হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সমন্বয়ে সমিতি গঠন করে এ সোলার পাম্পের স্কিম পরিচালিত হচ্ছে। ইরি ও বোরো মৌসুম ছাড়াও সারা বছর নানা ধরনের মৌসুমি সবজির চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে এ সোলার সেচ পাম্প।
কৃষক বাদল মিয়ার দাবি, এসব স্থাপনকৃত সোলার পাম্পের উৎপাদিত শক্তি সংরক্ষণের জন্য ব্যাটারির কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে শুধু দিনের বেলায় সেচ দিতে হয়। এ ছাড়াও শীতকাল ও আবহাওয়া খারাপ থাকলে সেচ দেওয়া যায় না। তবে ব্যাটারির ব্যবস্থা হলে দিনের সঙ্গে রাতের বেলায়ও সেচ দেওয়া যেত। এতে এ সেচ সুবিধার মধ্যে আসত আরও বেশি সংখ্যক কৃষক।
বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ফারুক হোসেন বলেন, পরিবেশবান্ধব সেচ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে সৌরশক্তির এ সেচ
পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। কৃষকরা বিনামূল্যে সরকারি এ সুবিধা ভোগ করতে পারছেন। এ সেচ পাম্প চালাতে কোনো খরচ হয় না বিধায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা এমন ধরনের সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্পের দিকে প্রতিনিয়তই ঝুঁকছেন।
এ বিষয়ে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন বলেন, কৃষিবান্ধব সরকার কৃষির উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পানি সংরক্ষণ, সেচের অপচয় রোধ, ভ‚-উপরিস্থ পানির ব্যবহারের লক্ষ্যে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ তেমনি একটি উদ্যোগ। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার কৃষকদের সৌরশক্তির ব্যবহারের ওপর আগ্রহ তৈরি করছে। ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসবে।