এবারের লকডাউনে দেশের এক কোটি ২৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার। এসব পরিবারকে ১০ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, লবণ ও সয়াবিন তেল এবং চার কেজি আলু দেওয়া হবে। এক সপ্তাহের জন্য একবার সহায়তা পাবে এসব পরিবার। আর লকডাউন না বাড়লে এ কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সমকালকে বলেন, আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে দরিদ্রদের সহায়তায় সম্প্রতি ভিজিএফ কর্মসূচিতে ৪৫১ কোটি টাকা ও জিআর কর্মসূচিতে ১২১ কোটি টাকা ছাড় করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের অনেকে সমস্যায় পড়বেন। এজন্য ভিজিএফ ও জিআরের অর্থ বিতরণ স্থগিত করা হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, লকডাউনের কারণে যেসব পরিবার সমস্যায় পড়বে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। ভিজিএফের অর্থ পরে ছাড় করা হবে।তিনি বলেন, গত বছর সাধারণ ছুটির সময় সারাদেশে এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। এসব পরিবারের তালিকা সরকারের কাছে রয়েছে। এবারও প্রাথমিকভাবে তাদের সহায়তা করা হবে। পাশাপাশি দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল যে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার সমস্যায় থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের সহায়তা করা হবে। লকডাউন বাড়লে প্রথমবার সহায়তা দেওয়ার ১৫ দিন পর পুনরায় দেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় বাজার থেকে এসব খাদ্যসামগ্রী কিনে সমস্যাগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে দেবে।ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সারাদেশের এক কোটি ৯ হাজার ৯৪৯টি ভিজিএফ কার্ডধারী অতি দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারকে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে ৪৯২ উপজেলায় ৮৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৩ জন এবং ৩২৮ পৌরসভায় ১২ লাখ ৩০ হাজার ৭৪৬ জন ভিজিএফ কার্ডধারী ছিলেন। প্রতি কার্ডের বিপরীতে ৪৫০ টাকা নগদ দেওয়ার জন্য মোট ৪৫০ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫০ টাকা ছাড়ও করে। এ ছাড়া জিআর কর্মসূচির আওতায় ১২১ কোটি টাকা ছাড় করে মন্ত্রণালয়। করোনার বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণার কারণে এই ভিজিএফ ও জিআরের অর্থছাড় স্থগিত করে গত রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এখন লকডাউন সময়ে খাদ্য সহায়তা দিতে মোট এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ভিজিএফ ও জিআরের অর্থছাড়ের পরিবর্তে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ছিল। আবার আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে এক সপ্তাহের লকডাউন। এ সময়ে রপ্তানিমুখী কলকারখানা ও জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবই বন্ধ থাকবে। এতে দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর আয়ের সুযোগ থাকবে না। ফলে এ ধরনের জনগণের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার এ ধরনের নাগরিকদের সহযোগিতা করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া ওএমএসের মাধ্যমে কম দামে চাল ও আটা বিক্রি বাড়িয়েছে সরকার। রমজান সামনে রেখে সরকারের বাণিজ্যিক সংস্থা টিসিবির বিক্রি বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে মাছ, ডিম ও মুরগির মাংস বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তর প্রয়োজনে গরু ও খাসির মাংসও বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছে।