সার্বভৌমত্ব রক্ষার উপযোগী করে প্রতিটি বাহিনীকে গড়ে তুলছি : প্রধানমন্ত্রী

admin
জানুয়ারি ১, ২০২১ ৩:০৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে বক্তৃতা করেন – পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যেন সব ধরনের উদ্যোগ এবং প্রশিক্ষণ থাকে, সেভাবেই আমরা আমাদের প্রতিটি বাহিনীকে গড়ে তুলছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এই স্বাধীন দেশ সব সময় বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলবে এবং আমরা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব রকম প্রস্তুতি নেব। কিন্তু কারও সঙ্গে যুদ্ধ নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আমরা চলব।’ গতকাল বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে (বিএনএ) বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান-২০১৮ ‘আলফা’ এবং ডিইও-২০২০ ‘ব্রাভো’ ব্যাচের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২০-এ যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খবর বাসস, ইউএনবি ও বিডিনিউজের।

এ সময় ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ উদ্ধৃত করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যে জাতি নিজেকে সম্মান করতে পারে না, আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না, সে জাতি দুনিয়ায় কোনোদিন বড় হতে পারে না। সে জন্য আজকে আমরা আত্মমর্যাদাবিশিষ্ট জাতি হিসেবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাস করতে চাই। আমরা অন্য কারও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না, অন্য কেউ আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক তাও আমরা সহ্য করব না- আমরা এই নীতিতেই বিশ্বাসী।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতার এই নির্দেশটা সব সময় মেনে চলতে হবে। আমাদের নবীন অফিসাররা জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলবে। তিনি জাতির জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন।’

মহান মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর ভূমিকার কথা স্মরণ করে বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকারে আসার পর খুলনা শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ড্রাই ডকইয়ার্ড, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডও নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিই। লক্ষ্য হলো, আমাদের নিজস্ব শিপইয়ার্ডে আমরা যুদ্ধজাহাজও তৈরি করব এবং এর কাজ ইতোমধ্যে আমরা কিছু কিছু শুরুও করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারের পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটি হচ্ছে। বিশাল সমুদ্রসম্পদকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকারে এসে আওয়ামী লীগ দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি নৌ, বিমান, সেনাবাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে উদ্যোগ নেয়।

কভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও জনগণের কল্যাণে বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে আমরা প্রায় ৯৯ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। ইনশাআল্লাহ প্রতিটি ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পারব, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দেব। বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না- এটাই আমাদের নীতি। সেই নীতিমালা অনুসরণ করে সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকায় যারা ভূমিহীন-গৃহহীন, তাদের সরকারিভাবে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষের ঠিকানা হবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। এটাই মুজিববর্ষ পালনের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ, যা আমাদের দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করবে, আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। আজকের নবীন কর্মকর্তারা তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হবেন। কাজেই এ দেশের ২০৪১ অর্জনের ক্ষেত্রে আপনারা সৈনিক হিসেবে কাজ করবেন। দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয় এবং তিনি মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজও প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় প্রশিক্ষণে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

শিশুদের চিকিৎসায় ১০ কোটি টাকা দিলেন প্রধানমন্ত্রী :ঢাকা শিশু হাসপাতালকে ১০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস জানান, জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বিনা অপারেশনে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য এ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বুধবার ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদের হাতে ১০ কোটি টাকার চেক তুলে দেন।

১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা শিশু হাসপাতাল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে একীভূত করার একটি প্রস্তাবে চলতি বছরের শুরুতে সম্মতি দেয় মন্ত্রিসভা।