ঢাকা থেকে জেলায় জেলায় টিকা পাঠানো শুরু হয়েছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় পৌঁছে যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে বেক্সিমকো কাজটি করছে। ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ব্যাপক হারে টিকাদান শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার টিকার প্রথম চালান গেছে বরিশাল ও ভোলা জেলায়। ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী বিভাগের কিছু জেলায় এবং বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলায় চলে গেছে।
বেক্সিমকো সূত্রে জানা গেছে, কোন জেলায় কার কাছে টিকা পৌঁছে দিতে হবে সেই নির্দেশনা অধিদফতর থেকে দেওয়া হয়েছে।
সেই তালিকা ধরেই বৃহস্পতিবার সারা দেশে টিকা পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম দিন দেশের ২৮ জেলায় টিকা যাবে। শুক্রবার পৌঁছানো হবে আরও ১০টি জেলায়।
শনিবার পৌঁছে দেবে আরও ১৮ জেলায় এবং ৩১ জানুয়ারি শেষ ৫টি জেলায় যাবে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার টিকা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, আগামী মাসে সারা দেশে ব্যাপক হারে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। সেজন্য সব জেলায় টিকা সরবরাহ করতে হবে।
ইতোমধ্যে চুক্তি অনুসারে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড সেই কাজ শুরু করেছে। আমাদের সিভিল সার্জনরা ইতোমধ্যে টিকা বুঝে নিতে শুরু করেছেন।
আশা করছি এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। সব কাজ সময়মতো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারব। বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের টঙ্গীতে অবস্থিত সেন্ট্রাল ওয়ারহাউজ থেকে টিকার চালান পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এদিন একটি চালান গেছে বরিশাল জেলায়। সেখান থেকে ঝালকাঠি, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলায় টিকা পৌঁছানো হয়। টঙ্গী থেকে রাজবাড়ীতে পৌঁছানো হয় টিকার চালান। সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে।
একই দিনে সেন্ট্রাল ওয়ারহাউজ থেকে টিকা পাঠানো হয় কুষ্টিয়ায়। সেখান থেকে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল গেছে। পাবনার চালান থেকে গেছে নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এছাড়া সিরাজগঞ্জ থেকে পৌঁছে দেওয়া হয় বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাটে।
একইভাবে আজ শুক্রবার টিকা যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেখান থেকে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট এবং সুনামগঞ্জে। এদিন মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জে পাঠানো হবে।
আগামী ৩০ জানুয়ারি শনিবার টিকা পাঠানো হবে গাইবান্ধায়। সেখান থেকে যাবে রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে। একইভাবে যাবে দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে।
এদিন বান্দরবানেও পাঠানো হবে। সেখান থেকে যাবে কক্সবাজার।
চট্টগ্রাম থেকে যাবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি। যশোর থেকে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও পিরোজপুর যাবে। আগামী ৩১ জানুয়ারি শেষ চালান পাঠানো হবে কুমিল্লায়। সেখান থেকে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরে।
এর আগে বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা দান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ২০ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার দেওয়া অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড দেশে পৌঁছায়।
এরপর ২৫ জানুয়ারি আসে সরকারের কেনা তিন কোটি ভ্যাকসিনের প্রথম ৫০ লাখ ডোজ। এছাড়া কোভ্যাক্সের কাছ থেকে বিশ্বের ৯২টি দেশের মতো বাংলাদেশও মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে।
বহুজাতিক কোম্পানির কর ফাঁকি ধরতে বৈশ্বিক তথ্যভান্ডারে যুক্ত হচ্ছে এনবিআর
দেশে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লেনেদেনের তথ্য নিতে এ সংক্রান্ত বৈশ্বিক তথ্যভান্ডারের যুক্ত হতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ ধরনের তথ্য সংরক্ষণকারী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ তথ্যভান্ডারে যুক্ত হতে পারলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। ফলে এসব কোম্পানির যথাযথ অডিট করা তথা লেনদেন আইনানুগ উপায়ে পাঠানো কিংবা বেশি দাম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিতে অর্থ পাঠানো হয়েছে কি না—তা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
বহুজাতিক কোম্পানিসহ আন্তর্জাতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত কর আদায়ের লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন প্রণয়ন করে। তবে এটি কার্যক্রম শুরু করে ২০১৪ সালে। এ লক্ষ্যে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল গঠন করা হয়। অবশ্য আইন প্রণয়নের এত দিনেও বৈদেশিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। ইস্যুটি এনবিআরের বিভিন্ন সভায়ও বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এক্ষেত্রে অন্যতম বাধা ছিল আন্তর্জাতিক তথ্যভান্ডারে আয়কর বিভাগের প্রবেশাধিকার না থাকায় তথা সেখান থেকে তথ্য না পাওয়া। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে এটি শুরু করতে পারেনি এনবিআর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত একটি কার্যক্রমের মাধ্যমে এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান মিলেছে। ‘সাপোর্টিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব পিএফএম রিফর্ম স্ট্র্যাটেজিজ প্ল্যান’ শীর্ষক ঐ কার্যক্রমের সহায়তায় ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিদেশি কোম্পানিগুলোর শাখা কোম্পানি সুদ, মুনাফা, কোনো সম্পদ কিংবা পণ্যের মূল্য মূল কোম্পানিতে পাঠায়। এছাড়া পণ্য বা সেবা আমদানির মূল্যও মূল কোম্পানি বা অন্য কোনো কোম্পানিকে পাঠায়। এটি ট্রান্সফার প্রাইসিং হিসেবে পরিচিত। তবে পণ্যের দর কম বা বেশি দেখিয়ে কিংবা মুনাফার অর্থ প্রেরণে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কর ফাঁকির পাশাপাশি অর্থপাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ রয়েছে, এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে থাকে। কিন্তু কার্যকর কোনো উপায় না থাকায় এসব কর ফাঁকি অধরাই রয়ে যাচ্ছে। সাধারণত যেসব দেশে কর হার বেশি, সে দেশের প্রতিষ্ঠান থেকে নানা কৌশলে কর হার কম—এমন দেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কর কম দিতে হয়, ফলে আয় বাড়ে। এটি একধরনের অর্থ পাচার। এতে প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপেক্ষাকৃত বেশি কর রয়েছে—এমন দেশগুলো। এভাবে বিশ্বব্যাপী অনেক বহুজাতিক কোম্পানি কর এড়িয়ে যায় বা ফাঁকি দেয়। অতীতে এনবিআর এ ধরনের কিছু ফাঁকি উদ্ঘাটনও করেছে। শুধু শাখা কোম্পানি এবং মূল কোম্পানি ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের নামে কারসাজির সঙ্গে জড়িত, এমন নয়। অন্য কোনো কোম্পানি পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেও মূল্য কারসাজি করে থাকে। এর ফলেও সংশ্লিষ্ট দেশ কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল থেকে বেশকিছু বহুজাতিক কোম্পানির লেনদেনের বিশেষায়িত নিরীক্ষা করা হয়েছে। বছরে কমপক্ষে তিন কোটি টাকা আন্তর্জাতিক লেনদেন হয়, এমন শতাধিক কোম্পানির লেনদেনের তথ্য নিরীক্ষা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, এমন ৯২১টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত এনবিআর। গত বছরের শুরুর দিকে এসব প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয় ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল থেকে। তবে সূত্র জানিয়েছে, এক-পঞ্চমাংশ প্রতিষ্ঠানও তাদের এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠায়নি।