প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চিন্তা থেকেই সরকার দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ, এখন থেকেই উদ্যোগী না হলে দেশ পিছিয়ে যাবে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই।
বিশ্ব প্রযুক্তিগতভাবে যতটুকু এগোবে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমরা চলব।
গতকাল বুধবার ফ্রিল্যান্সার আইডি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি জানি, আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী। অল্পতেই তারা শিখতে পারে। সরকারের কাজ হচ্ছে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া। সেটাই আমরা করে দিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ৩৯টি হাইটেক বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণ শেষ হলে প্রায় তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে যুবসমাজই সবচেয়ে বেশি কাজ পাবে। দেশ ও বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে এবং দক্ষ কর্মী বাহিনী সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, সরকার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপনসহ দক্ষ কর্মী বাহিনী সৃষ্টিতে নানা রকম প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলায় সরকার ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেখানে দক্ষ কর্মক্ষম লোক সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামীর বাংলাদেশ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পাচ্ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেকদূর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিই পারবে আমাদের দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ফলে আমাদের যে মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে, তাতে দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। আর ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এমন এক ধরনের উদ্যোগ, যার মাধ্যমে ঘরে বসেও অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে যেমন অর্থ উপার্জন করতে পারবে, তেমনি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখারও সরাসরি সুযোগ পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য কোনো অফিস-আদালতে যেতে না হলেও এর মাধ্যমে যেহেতু নিয়মিত অর্থ উপার্জন করা যায়, সেহেতু এটাও একটা কাজ, এটাও একটা চাকরি। এটা হচ্ছে নিজেই নিজের বস। নিজে শুধু বস নয়, আরও অনেকেরও কাজের সুযোগ করে দেওয়া, যে কারণে এর স্বীকৃতি দরকার ছিল। ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করায় রেমিট্যান্সও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয়কে শুরু থেকেই বলে এসেছি এটা করতে হবে, তুমি উদ্যোগ নাও। আমাদের এই ছেলেমেয়েদের একটা স্বীকৃতি দেওয়া একান্তভাবে দরকার।’
তিনি বলেন, আজকে ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড প্রদানের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সব ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এই আইডি কার্ডের মাধ্যমে তারা সামাজিক পরিচিতির পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ নিতে পারবে, আর চাকরি খুঁজতে হবে না, নিজেরা কাজের পাশাপাশি অন্যকেও কাজ দিতে পারবে। গৃহিণীরা ঘরে বসে এর মাধ্যমে কাজ করে কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাওয়ায় নারীর আরও ক্ষমতায়ন ঘটবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেখাপড়া শিখে শুধু ঘরে বসে গিন্নিগিরি করা নয়, তারাও কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবে। ঘরে বসে কাজ করতে পারায় ছেলেমেয়েরা যেমন মাকে কাছে পাবে, তেমনি কিছু অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সে নিজের পরিবারে ভূমিকা রাখতে পারবে। কাজেই ছেলেমেয়ে সবার জন্যই এখানে একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সভাপতিত্ব করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।