প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবায়ের স্পর্শে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মূল্যবোধের চর্চা ও সমবায়ভিত্তিক সমাজ গঠন করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আগামীকাল জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে আজ দেওয়া বাণীতে বলেন, ‘আসুন, জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘সমবায়ের যাদুস্পর্শে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মূল্যবোধের চর্চা ও সমবায় ভিত্তিক সমাজ গঠন করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করি’।’
শেখ হাসিনা জানান, ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় ৪৯তম ‘জাতীয় সমবায় দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ উপলক্ষে দেশের সকল সমবায়ী ও সমবায়বান্ধব জনগণকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের দৃঢ় প্রত্যয়, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন ধরনের গণমুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের ফলে করোনা-মহামারি থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায়, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সমবায় সংগঠন অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতি ও সমবায়ীগণকে ২০১৯ সালের জাতীয় সমবায় পুরস্কার প্রদান নিশ্চয় দেশের সকল সমবায়ীকে আরও উৎসাহিত করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে সমবায় কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, পোশাক, দুগ্ধ উৎপাদন, আবাসন, ক্ষুদ্র ঋণ ও সঞ্চয়, কুটির-চামড়াজাত-মৃৎশিল্প ইত্যাদি খাতের বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ক্ষেত্রে উন্নয়নসহ, ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে বিশাল অবদান রাখছে।
এ বছর কোভিড-১৯ সারা বিশ্বে স্থবিরতা সৃষ্টি করলেও, আমাদের সমবায় সমিতিগুলো এ সময় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সদস্যদের ঋণ মওকুফসহ দুর্গত সদস্যদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে সংবিধানের ১৩(খ) অনুচ্ছেদে সম্পদের মালিকানার দ্বিতীয় খাত হিসেবে সমবায়কে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং সমবায়কে গণমুখী আন্দোলনে পরিণত করার ডাক দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণে দরিদ্র, ভূমিহীন, নিম্নবিত্ত দুগ্ধ উৎপাদনকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণপূর্বক সমবায়ের মাধ্যমে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ‘সমবায় দুগ্ধ প্রকল্প’ নামে একটি দুগ্ধ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে পাঁচটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী এলাকায় দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করেন।
আজকের মিল্কভিটা তারই সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের ফসল জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির পিতা সমবায় পদ্ধতিতে সমন্বিত-যৌথ খামার প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় রাজস্বে পল্লী উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সঙ্গে পল্লী উন্নয়নে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
‘আমরা ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করি এবং পরবর্তীতে ২০১২ সালে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিতে রূপান্তরিত করি। দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক অগ্রগতি ও নারী-পুরুষ সমতার উদ্দেশ্যে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন আইন, ১৯৯৯ প্রণয়নের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করি,’ বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ এবং জাতীয় সমবায় নীতিমালা, ২০১২ প্রণয়ন করি। পুনরায় সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ‘আমার বাড়ী, আমার খামার প্রকল্প’ গ্রহণ করি। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় ১ লক্ষ ২১ হাজার ১৪২টি সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে- যার উপকারভোগী সদস্য পরিবার ৫৬ লাখ ৪১ হাজার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, ‘সমবায় খাতে বাজেট বৃদ্ধি করেছি, সমবায়ীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছি, আর্থিক ও উপকরণ সহায়তার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনসহ সমবায়ীদের জীবনমান ও সামাজিক ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। সরকারের প্রচেষ্টায় সমবায় সমিতি এবং সমবায়ীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে সমিতি ১,৯০,৫৩৪টি এবং সদস্য ১,১৪,৮৩,৭৪৭ জনে উন্নীত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী ৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।