সবজি রপ্তানি বেড়ে এক দশকে ৪ গুণ

admin
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২১ ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

উৎপাদন বাড়ছে প্রতি বছর
উৎপাদনের পাশাপাশি সবজি রপ্তানি বাড়ছে প্রতিবছর। গত অর্থবছরে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল চার কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এক দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় প্রায় চার গুণ বেড়েছে। করোনার কারণে সাময়িক গতি কমলেও সবজি রপ্তানিতে ব্যাপক সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, নেপাল, ব্রুনাই, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে আলু ও সবজি রপ্তানি হয়। করোনার কারণে গত বছরের কয়েক মাস সবজি রপ্তানি কমলেও সম্প্রতি আবার রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সমকালকে বলেন, সবজি রপ্তানির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবছরই রপ্তানি বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সবজির চাহিদা বাড়ছে। তবে করোনার কারণে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে বিমান যোগাযোগে হেরফের হওয়ায় রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

রাজধানীর পাশাপাশি আঞ্চলিক পর্যায় থেকেও এখন রপ্তানি হচ্ছে। বাঁধাকপি উৎপাদনের জন্য উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সুনাম রয়েছে। একসময় ভরা মৌসুমে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হতেন কৃষকরা। কখনও কখনও চাষের খরচও তুলতে পারতেন না তারা। তবে দিন বদলাতে শুরু করেছে। বগুড়ার বাঁধাকপি এখন রপ্তানি হচ্ছে ছয়টি দেশে। এই রপ্তানিতে ভূমিকা রাখছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাসওয়া এগ্রো লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি আলু, মিষ্টিকুমড়া, বাঁধাকপি প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানি করে।

একসময় মৌসুম বা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বাজারে সবজির সরবরাহেও পরিবর্তন হতো। টমেটো, শিম, কিংবা কপির মতো সবজি পেতে শীতকালের অপেক্ষা করতে হতো। গ্রীষ্ফ্মকালে বাজারে সবজির সরবরাহ কম থাকত। সেদিন আর নেই। এখন বছরজুড়ে ২০ থেকে ২৫ জাতের সবজি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন কৃষকরা। দেখা যাচ্ছে নতুন ধরনের সবজি। কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ১৫ বছরে দেশে সবজি চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ বেড়েছে। উৎপাদনও বাড়ছে প্রতিবছর। দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজারের জন্য সবজি উৎপাদন করছেন চাষিরা। ভালো লাভও পাচ্ছেন। ফলে শিক্ষিত তরুণরাও ঝুঁকছেন সবজি চাষে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সবজি উৎপাদনের হার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কর্মকর্তারা জানান, একসময় দেশের বিশেষ কয়েকটি জেলাতে বড় পরিসরে সবজির চাষ হতো। বর্তমানে সব জেলাতেই সারাবছর সবজির চাষ হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এসব সবজির ৯০ শতাংশ বীজই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উন্নত জাত এবং সরকারের বিভিন্ন সহায়তার সঙ্গে কৃষকের শ্রম যুক্ত হয়েই এসেছে আজকের সফলতা। তবে আগামী দিনে পুষ্টি নিশ্চিত করতে সবজির উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। আরও উন্নত জাত উদ্ভাবনের দিকে যেতে হবে।

ডিএই মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ সমকালকে বলেন, সবজি চাষে দেশে বিপ্লব হয়েছে। একসময় সবজি ছিল অতিরিক্ত চাষ। বর্তমানে শুধু সবজিই চাষ করেন এমন কৃষক অনেক। নানা পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। নতুন নতুন জাত এসেছে। যে কারণে সারাবছর সবজি পাওয়া যাচ্ছে। রপ্তানিও বেড়েছে। আগামীতে সবজি চাষ আরও বাড়বে। এ খাতে অনেক সম্ভাবনা।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সারাদেশে ৯ লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমিতে শীত ও গ্রীষ্ফ্মকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয় ডিএই। ডিএই আশা করছে, এবার এক কোটি ৯৭ লাখ টন উৎপাদন হবে। গত অর্থবছরে ৯ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। তা থেকে এক কোটি ৮৪ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল এক কোটি ৩০ লাখ টন। এদিকে আলুকে ডিএই সবজি হিসেবে ধরে না। কিন্তু দেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় আলু অন্যতম সবজি। চলতি অর্থবছরে চার লাখ ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এ থেকে এক কোটি ১৪ লাখ টন আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত অর্থবছরে এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়।

আলু, টমেটোর মতো সবজি প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত হচ্ছে। আলু থেকে চিপস, টমেটো থেকে সস বা কেচাপ তৈরি হচ্ছে। এ জন্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানি চুক্তিভিত্তিক চাষ করাচ্ছে। রপ্তানি বাড়াতে সরকারও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। রপ্তানিযোগ্য সবজি ও ফলমূল রাজধানীর শ্যামপুরের বিসিক শিল্পনগরীতে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে বাছাই করে প্যাকেটজাত করা হয়। প্যাকেট করা সজীবতা ধরে রাখতে ঢাকার পূর্বাচলে কুলিং চেম্বার হচ্ছে। আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী সবজি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের উন্নত বীজ, কীটনাশক ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে পৌনে দুই কোটি কৃষক পরিবার রয়েছে। এসব পরিবার কমবেশি সবজি চাষ করে। বাড়ির উঠান বা খালি জায়গা, জমির পাশের উঁচু স্থান, আইল, টিনের চাল এবং পুকুরে মাচা দিয়ে কৃষকেরা সবজির চাষ করছেন। ফলে মোট কৃষিজমির পরিমাণ কমলেও সবজি চাষ বেড়েছে।

জাপানি সংস্থা ফিনেট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পরামর্শক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার সমকালকে বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষ গড়ে মাথাপিছু ১৩৮ গ্রাম সবজি খান, যা ১০ বছর আগে ছিল ১০০ গ্রামের কম। আগামীতে এই পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ, একজন মানুষের দৈনিক ২৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া উচিত। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন যত হবে, সবজি ও ফল খাওয়ার প্রবণতা ততটা বাড়বে। ফলে সবজির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।