ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্ববায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, আন্তর্জাতিক ক্ষ্যাতিসম্পন্ন সমাজসেবক শহীদ মোহাম্মদ ময়েজ উদ্দিন। আজ রোববার শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৬ম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে “সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের ভূমিকা” শীর্ষক এক আলোচনা ও স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
যুব-সমাজের কিছু কর্মকাণ্ডে রাজনীতি কলঙ্কিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান। ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশে এখনো বিএনপি-জামায়াত রাজনীতি করছে। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। সুতরাং তাদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, শহীদ ময়েজ উদ্দিনের মতো আদর্শবান রাজনৈতিক নেতার বড় প্রয়োজন। শহীদ ময়েজউদ্দিন ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের আদর্শ তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে। তাঁদের নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, ছয় দফা আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিজয় পর্যন্ত ময়েজ উদ্দিন এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে লোভ, সুবিধা ও কাপুরুষতা তাকে কখনো স্পর্শ করেনি। গণ মানুষের স্বার্থকে তিনি সবসময় মর্যাদা দিয়েছেন।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেন, শহীদ ময়েজউদ্দিন নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুথান আন্দোলন ছাড়াও স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য আন্দোলন, প্রতিটি পর্যায়ে তাঁর যে আন্দোলন এবং ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে উনি যেভাবে মানুষের কাছে যেয়ে যেয়ে সবাইকে উদ্ভুত করেছিলেন, তাঁর এসব গুরুত্বপূর্ণ অবদান নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কালীগঞ্জে সেনাশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন শহীদ হয়েছিলেন। তার কন্যা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও ময়েজউদ্দিন স্মৃতি পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মেহের আফরোজ চুমকি এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও শহীদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।
মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ময়েজউদ্দিনই প্রথম শহীদ হয়েছিলেন। দেশ-বিদেশে খ্যাতিমান একজন আইনজীবী, সমাজকর্মী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী শহীদ ময়েজউদ্দিন ১৯৩০ সালের ১৭ মার্চ গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বড়হরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাহসী ও পরোপকারী রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ময়েজউদ্দিন স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। তিনি ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করার জন্য গঠিত ‘মুজিব তহবিলের’ও আহবায়ক ছিলেন।
একজন শিক্ষক ও সমাজসেবক, একজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী হিসেবে শহীদ ময়েজউদ্দিনের কর্মজীবন ও আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন।