শহরের সুবিধা পাবে ১৫ গ্রাম

admin
অক্টোবর ৬, ২০২০ ৯:০১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

 

গ্রামের মানুষকে অবহেলিত রেখে উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়, তাই গ্রামে শহরের সব সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আমার গ্রাম, আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভায় সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি জানান, আট বিভাগের আটটি গ্রাম এবং সাতটি বিশেষ অঞ্চলের সাতটি মোট ১৫টি গ্রামকে আমার গ্রাম, আমার শহরের উদ্যোগের আওতায় আনতে প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, হকারের পাশাপাশি পথচারীদের কথা মাথায় রেখেই ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বৈঠকে পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে জানানো হয় প্রতিবছর গ্রাম থেকে  কাজের জন্য ১০-২০ হাজার মানুষ ঢাকায় আসে। পরবর্তী সময়ে তারা ঢাকায় স্থায়ী বাসিন্দা হয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বস্তিতে বসবাস করে। গ্রামে যদি এসব মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে তারা ঢাকামুখী হবে না এতে ঢাকার ওপর জনসংখ্যার চাপ কমবে। বর্তমানে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় আসেন চিকিৎসার জন্য। যে কারণে গ্রামে শহরের মতো কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
বৈঠকে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, উন্নত জীবনের আশায় মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে। আমরা যদি গ্রামে শহরের সব সুবিধা নিশ্চিত করি তাহলে মানুষ আর শহরে আসবে না। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করার কথাও জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ উদ্যোগ গ্রহণের বিশেষ অঙ্গীকার করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে উন্নত যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করা হবে।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, গ্রামে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর গুণগতমান এবং টেকসই নিশ্চিত করা। মন্ত্রী বলেন, গ্রামে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা তৈরি করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তাই সব মন্ত্রণালয় একত্র হয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এ পরিকল্পনা বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। সরকারের বিশেষ উদ্যোগ আমার গ্রাম, আমার শহর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানোর জন্য সচিবদের প্রতি আহ্বান জানান মো. তাজুল ইসলাম।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি মন্ত্রী জানান, হকারের পাশাপাশি পথচারীদের কথা মাথায় রেখেই ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা পর্যালোচনা করে যেটা যৌক্তিক হবে, যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, হকার যিনি তিনি বাংলাদেশের জনগণ, যিনি ফুটপাথ ব্যবহার করেন তিনিও বাংলাদেশের জনগণ। উভয় পক্ষের যেসব সীমাবদ্ধতা আছে সেসব সীমাবদ্ধতা এবং সুযোগ আছে সেগুলোকে বিবেচনায় রেখেই আমরা কাজ আরম্ভ করেছি, আমরা পেপার ওয়ার্ক করেছি, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করব।
‘আমার গ্রাম আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর’ কর্মী পরিকল্পনা প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আমরা গ্রামীণ অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশন ইত্যাদির ওপর জোর দিয়েছি। সারা বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতির এখন অনেক উন্নত। সব দেশের অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে জানিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, সারফেস ওয়াটার ব্যবহার না করলে গ্রাউন্ড ওয়াটার নিচে নেমে যাচ্ছে। এ জন্য আমরা সারফেস ওয়াটারের দিকে যাব। একটা গ্রামকে চিহ্নিত করার জন্য বলেছি, যে গ্রামটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেব। আমরা মানুষগুলোর যদি জীবনমানের উন্নতি করতে পারি, রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারি, সে যদি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা রোজগার করতে পারে তাহলে জীবন-মান উন্নত হবে। এটার জন্য স্টাডি করা হচ্ছে।
সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব-সচিব এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন।