বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার আজ বলেছেন, তার দেশ রোহিঙ্গা সম্প্রদায় তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে যেন টেকসইভাবে ও নিরাপদে ফিরে যেতে পারে, তার ‘বাস্তব অগ্রগতি’ দেখতে চায়। রাজধানীতে ব্র্যাক কেন্দ্রে মার্কিন তহবিলকৃত ‘এসটিইএম’ শিক্ষা প্রকল্প উদ্বোধনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সত্যিই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখতে চাই।’ খবর বাসসের।
মিলার বলেন, সকল রোহিঙ্গার নিরাপদ, টেকসই ও সম্মানের সাথে ফিরে যাবার মতো পরিস্থিতি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে এবং ‘অবিলম্বে প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত।’ মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়ে ইঙ্গিত করে মিলার বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশে (মিয়ানমার) কি হচ্ছে এবং তা কিভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রভাব ফেলবে, আমাদের তা দেখতে হবে।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূত গণতন্ত্র নস্যাৎকারী মিয়ানমারের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। মিলার বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ ব্যাপারে আরো পদক্ষেপ নেয়া উচিত এবং এই অঞ্চল ও বিশ্বের সংকটটি সমাধানে বাংলাদেশকে সাহায্য করা উচিত।
বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় দিয়েছে এবং এদের অধিকাংশই মিয়ানমারে সামরিক দমন-অভিযান শুরু হওয়ার পর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পৌঁছেছে। জাতিসংঘ এই সামরিক দমন-অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ’ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক সহায়তার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে গত সপ্তাহে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অস্ট্রেলিয়া ও জাপানি রাষ্ট্রদূতের সাথে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এটি তার ১২তম পরিদর্শন উল্লেখ করে মিলার বলেন, সফরটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যহত সমর্থনের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ইতিবাচক বার্তা। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু মানবিক সহায়তার সমর্থনই নয়। বরং এর পাশাপাশি মিয়ানমারের উপর চলমান চাপেরও সমর্থন।’
মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি অংশীদার রাষ্ট্র হিসেবে নতুন বাইডেন প্রশাসনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যহত রাখার পাশাপাশি আশ্রয়দানকারী সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের সমর্থন দিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, নতুন মার্কিন সরকার রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গণহত্যা চালানোর যে অভিযোগ রয়েছে, তা পর্যালোচনা করতে শুরু করেছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত কক্সবাজারে অতি-ঘনবসতিপূর্ণ রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মহামারি মোকাবেলায় ‘লক্ষণীয়’ সাফল্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশী সম্মুখ সারির স্বাস্থ্য-কর্মীদের ভূয়সী প্রশাংসা করেছেন।
তিনি বলেন, আধুনিক ইতিহাসে বাংলাদেশের মতো আর কোন দেশ এতো বড় শরণার্থীর বোঝা গ্রহণ করেনি।
সোমবার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন জেনারেলের উপর অবরোধ আরোপ করে কোন কাজ হবে না।’
তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার মারাত্মক মানবাধিকার লংঘন করেছে। কিন্তু কয়েকটি দেশ, যারা মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে, তারা মিয়ানমারের সাথে ব্যবসা করছে এবং বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে।