রেলে সরকারের সুনজর

admin
নভেম্বর ২, ২০২০ ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ রেলওয়ে সবচেয়ে বড় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ রেলে যাত্রীভ্রমণ আরামদায়ক ও আরও উন্নতমানের করতে সরকারের সুনজর বাড়ছে। একই সঙ্গে রেল থেকে কীভাবে আরও বেশি রাজস্ব আসে তারও পরিকল্পনা আঁটছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় রেলের পূর্বাঞ্চলে মোট ৫১২টি লেভেল ক্রসিং গেট আলোকায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রেলের পশ্চিমাঞ্চল বহরে যাত্রীবাহী ক্যারেজ বাড়ানো হচ্ছে। এ তথ্য রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্রের। ঢাকা বিভাগে ৩৭৫টি আর চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৭টি লেভেল ক্রসিং গেট রয়েছে। বেশিরভাগ গেটে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় দুর্ঘটনা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এ ছাড়াও অনেক সময় নিরাপদ বিঘ্নিত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে এসব রেলক্রসিং গেটে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার খেসারত যাত্রীদের দিতে হয়েছে। এসব লেভেল ক্রসিংয়ের গেটগুলোতে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব কাজ সম্পন্ন করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এই প্রকল্পের প্রভাব সম্পর্কে বলেন, বিদ্যুৎবিহীন লেভেল ক্রসিং গেটে বিদ্যুতায়ন করা হলে রাত্রিকালীন সময়ে জনসাধারণ বিশেষ করে নারীদের যাতায়াত বাড়বে। ফলে তাদের জীবনমান উন্নয়ন হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়ক হবে। সৌর বিদ্যুতায়িত বাতি লেভেলে ক্রসিং গেটে ব্যবহারের মাধ্যমে গেটগুলোর নিরাপত্তায় জোরদার ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও দুর্ঘটনাজনিত আর্থিক ও জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি লাঘব হবে। সর্বোপরি এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যবহার কমে আসবে। পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হবে। শিগগির এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ৫০টি বিজি ও ৫০টি এমজি আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে যেসব বিজি ও এমজি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে তা রাজস্ব খাতের আওতায় মেরামত কিংবা পুনর্বাসন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। যে কারণে নতুন করে এসব যাত্রীবাহী ক্যারেজের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কেন এই উদ্যোগ?
এ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের অন্য এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য রেলপথে যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি রেলের অতিরিক্ত রাজস্ব নিশ্চিত করা। এ ছাড়াও পরিবহন খাতে দক্ষতা বাড়ানো। ৫০টি বিজি ও ৫০টি এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চলীয় বহরে যুক্ত হবে। মোটকথা এতে যাত্রীসাধারণের কাছে রেলের ভাবমূর্তি বাড়বে।
বর্তমানে যে ট্রেন রয়েছে তাতে বেশি পরিমাণ কোচ সংযুক্ত হবে। ফলে বেশিসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। এর সঙ্গে রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। ৫০টি বিজি ও ৫০টি এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজন হবে ১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। আগামী তিন বছরের মধ্যে এসব যাত্রীবাহী ক্যারেজ বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বহরে ৪৬৭টি বিজি ও ২০৩টি এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ চলাচল করছে। কিন্তু রাজস্ব খাতে পর্যাপ্ত বাজেট না থাকার ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ মেশিনারির কারণে ক্যারেজগুলো সময়মতো মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়াও রেলওয়ে বিভাগে জনবল ঘাটতি রয়েছে। রেল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী মঞ্জুরি করা ২ হাজার ৮৩৪ জনের বিপরীতে এখন জনবল রয়েছে ৮৯৭ জন। অর্থাৎ জনবল ঘাটতি ৬৮ শতাংশ।