আগস্টেও বেড়েছে আয়
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এই মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থগিত ও বাতিল হওয়া বিদেশিদের ক্রয়াদেশ আবারও ফিরে আসছে। এতে বাড়ছে রফতানি। করোনার কারণে চলতি বছরের মার্চ থেকে বিপর্যস্ত রফতানি নতুন অর্থবছরের শুরু থেকেই আশার আলো জাগিয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের আগস্ট শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি বেড়েছে ১ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা উঠে এসেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে দেশে দেশে লকডাউন চলে। এতে বছরের শুরুর দিকে পুরো বিশ্ব অচল হয়ে পড়ে। স্থবির হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে অর্থনীতি। এমন অবস্থায় সরাসরি বাণিজ্যিক আঘাত হানে দেশের রফতানি খাতে। এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য খুলতে শুরু করেছে। লকডাউনে বাতিল ও স্থগিত হওয়া রফতানি আদেশ ফিরতে শুরু করেছে। এতে মহামারির প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন রফতানিকারকরা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জুলাই ও আগস্ট মাসের আভাস দিয়ে আগেই বলেছেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যেও চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে রফতানি বাণিজ্যে দেশে ঐতিহাসিক রেকর্ড সৃষ্টি হবে।’ তারই পুনরাবৃত্তি ঘটলো।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরের (জুলাই-আগস্ট) প্রথম দুই মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৮১ কোটি মার্কিন ডলার। বিপরীতে আয় হয় ৬৮৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রথম দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১ শতাংশ। একই সঙ্গে অর্জিত রফতানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। আগে রফতানি হয়েছিল ৬৭৩ কোটি ২১ লাখ ডলার।
দেশে রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। করোনার কারণে গত মার্চ থেকে এ খাতের রফতানি কমতে শুরু করে, এপ্রিলে পোশাক রফতানিতে ভয়াবহ ধস নামে। মে মাসেও তা অব্যাহত থাকে। জুন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এর ধারাবাহিকতা জুলাই ও আগস্টেও অব্যাহত রয়েছে।
ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ যে আয় করেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট সময়েও একই আয় করেছিল। তবে পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। জুলাই-আগস্ট সময়ে পোশাকখাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয়ের অঙ্ক ছিল ৫৭১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আয় হয় ১৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে প্লাস্টিক জাত পণ্য রফতানি কমেছে। জুলাই-আগস্ট সময়ে প্লাস্টিক জাত পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল দুই কোটি চার লাখ ডলার। বিপরীতে আয় হয়েছে এক কোটি ৭১ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ১৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ১৭ শতাংশ।
ইপিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে কৃষিপণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, বিপরীতে আয় হয়েছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে এ খাতে রফতানি আয় হয়েছিল ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। বিপরীতে আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় ৪৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে একক মাস হিসাবে সদ্যসমাপ্ত আগস্টে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ২৯৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার, যা গত বছরের আগস্ট মাসের চেয়ে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। আগস্ট মাসে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ।
এর আগে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৪৪ কেটি ৯০ লাখ ডলার। বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৯১ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রথম মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। একই সঙ্গে অর্জিত রফতানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে শূণ্য দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, শ্রোতের বিপরীতে সাধারণ ছুটির মধ্যেও কারখানা খুলে দেয়ার মতো চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত নেয়ার সুফল এখন রফতানি খাত পাচ্ছে। রফতানি খাত অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এই খাতের সঙ্গে আরও অনেকগুলো খাত সম্পৃক্ত। রফতানি খাত শক্তিশালী হলে অর্থনীতির অন্যান্য খাতও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এ কারণে রফতানি খাতে যেসব সমস্যা এখনও বিদ্যামান রয়েছে, তা দূর করা সম্ভব হলে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়বে। একইভাবে রফতানির পরিমাণও বাড়বে।