প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে সোমবার এই তালিকা তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক দেলওয়ার হোসেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে
বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
নতুন দুই লাখ ৩০ হাজার মিলিয়ে ছয় দফায় মিয়ানমারের কাছে আট লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪২ হাজার জনের তালিকা যাচাই করেছে মিয়ানমার।
প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের নিবাস মিয়ানমারের দিক থেকে আন্তরিকতার অভাবের কথা বলে আসছে বাংলাদেশ।
৬। কারসাজি হচ্ছে কিনা তদন্ত করবে স্টক এক্সচেঞ্জ
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ারদর বেশ কিছু দিন থেকে এক নাগাড়ে বাড়ছে। বেশির ভাগের দাম বাড়ায় স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্য সূচকও অনেক বেড়েছে। লেনদেন আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে অল্প দিনের ব্যবধানে। গতকাল মঙ্গলবারও প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪২ পয়েন্ট বা আড়াই শতাংশ বেড়েছে। কেনাবেচা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার।
বাজারের এমন চাঙ্গা অবস্থার সুযোগে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এ প্রবণতা থেকে বাদ যায়নি মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারদরও। এ পরিস্থিতিতে যৌক্তিক কারণ ছাড়া এক মাসের মধ্যে কোনো শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডের দরবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কারসাজি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের ২৪ ধারার অধীনে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাদের তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কোন কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনের কারণ খুঁজতে হবে, সেটি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। কমিশন দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ৩০ কার্যদিবসে যেসব কোম্পানির সমাপনী মূল্য (ক্লোজিং প্রাইস) অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে, সেগুলোর দরবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কোম্পানির প্রকাশিত বার্ষিক বা প্রান্তিক প্রতিবেদনে উল্লেখিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে থাকলেও তা খতিয়ে দেখতে হবে। এটির সঙ্গে কারসাজির কোনো সংযোগ আছে কিনা তা তদন্ত করতে হবে। এর বাইরে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বশেষ এক মাসের গড় লেনদেনের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বাড়লেও তা খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি সম্প্রতি প্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের আগের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্নিষ্ট কোম্পানির শেয়ারদর বা লেনদেন হওয়া শেয়ার সংখ্যা ৩০ শতাংশ বাড়লেও নেপথ্যের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংশ্নিষ্টতা খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে।
কমিশন একই সঙ্গে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালক বা অন্য কোনো ইনসাইডারদের (যাদের কোম্পানির আয়-মুনাফাসহ ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সুযোগ আছে) সংশ্নিষ্টতাও খতিয়ে দেখতে বলেছে।
সর্বশেষ ৩০ কার্যদিবসে ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অন্তত ২১ কোম্পানির শেয়ারদর অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে তালিকাভুক্ত হওয়া রবি রয়েছে সবার ওপরে। ২৪ ডিসেম্বর তালিকাভুক্তির পর সর্বশেষ ১৩ কার্যদিবসের প্রতিদিনই শেয়ারটি সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়েছে, গতকাল শেয়ারটি সর্বশেষ ৬৩ টাকা ২০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র তিন সপ্তাহে শেয়ারটির দর অভিহিত মূল্যের তুলনায় ছয় গুণ ছাড়িয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে, এর আগে তালিকাভুক্ত হওয়া ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ও ডোমিনেজ স্টিলের ক্ষেত্রে। উভয় শেয়ারের দর গত ৩০ কার্যদিবসে যথাক্রমে প্রায় পাঁচগুণ ও সাড়ে তিনগুণ হয়েছে। অবশ্য অস্বাভাবিক হারে দরবৃদ্ধির পর ডোমিনেজ স্টিলের দরপতন শুরু হলে তার কারণ খতিয়ে দেখতে এর আগে তদন্ত কমিটি করেছিল বিএসইসি।