প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (সিসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের মানুষের কল্যাণ করা, তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করা, এটাই যেন সবার লক্ষ্য হয়। নির্বাচন একবারেই শেষ হয়ে যায় না। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে বারবার নির্বাচিত হওয়া যায়, অন্য কিছু লাগে না-এটাই আমরা বিশ্বাস করি।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মুজিববর্ষে গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্পে অতিরিক্ত ৫০ হাজার ঘর করে দেয়ার জন্য তিনি আরও এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করিয়েছেন। আমি আজকে এই মুজিববর্ষ উপলক্ষে আরও অতিরিক্ত ৫০ হাজার ঘর নির্মাণ করার জন্য ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছি। আমরা আরও এক লাখ ঘর তৈরি করে দিচ্ছি।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে শপথ পাঠ করান। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত সংরক্ষিত ১৪ এবং সাধারণ আসনের ৪০ কাউন্সিলরকে শপথ পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
উল্লেখ্য, দেশের প্রায় ৮ লাখ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আরও এক লাখ পরিবারকে জমিসহ ঘর করে দেয়ার জন্য আরও এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হলো। তার এই পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সার্ভে করে দেখেছি দেশের একটা মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে।
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ এলাকায় গৃহহীনদের তালিকা প্রণয়নের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এলাকায় দেখবেন কোন লোক গৃহহীন আছে কিনা, আপনারা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেবেন,আমরা কিন্তু ঘর করে দেব। একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। ইনশাল্লাহ!
তিনি বলেন, ২০২০ সালে মুজিববর্ষ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১, ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা সময় নিয়েছি এবং সেই সময়ের মধ্যে আমরা চাই বাংলাদেশের প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ ঘর পাবে, তাঁরা নিজস্ব ঠিকানা পাবে। বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে। তিনি বলেন, যেসব জায়গায় গ্রিড লাইন রয়েছে সেখানে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ইতোমধ্যে শেষ হলেও দুর্গম জায়গায় গ্রিড লাইন নেয়া সম্ভব না হওয়ায় সোলার প্যানেল এবং সাবমেরিন ক্যাবলের সহায়তায় তার সরকার বিদ্যুত পৌঁছে দিচ্ছে।
জনপ্রতিনিধিদেরকে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিলেও মাস্ক পরে থাকতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজের পাশাপাশি অন্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই এটা করতে হবে।
শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত মেয়র এবং কমিশনারদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের মানুষের কল্যাণ করা, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করা, এটাই যেন লক্ষ্য হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনারা কাজ করবেন, এটাই প্রত্যাশা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে আপনারা যে ওয়াদা দিয়ে এসেছেন আর আজকে যে শপথ নিলেন সেটা মাথায় রেখেই আপনারা মানুষের জন্য কাজ করবেন।
তিনি আরও বলেন, আপনারা আজকে শপথ নিয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষের কাছে যাবেন এবং সার্বিকভাবে উন্নয়নের যেসব কর্মসূচী আমরা হাতে নিয়েছি যথাযথভাবে তা যেন বাস্তবায়িত হয়। এখানে কোন রকম ঘাটতি যেন দেখা না দেয় এবং দ্রুত হয়- সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী করোনার মধ্যে সাহস করে ভোটকেন্দ্রে আসায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভোটারদের অভিনন্দন জানান এবং বলেন তার সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নে যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তার সুফল ইতোমধ্যে মানুষ পেতে শুরু করেছে। তিনি মেয়র-কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তাঁরা যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তাই জনগণের সেবাতেই নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময়ও যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে ভোটাররা যারা ভোট দিতে গেছেন এবং যারা নির্বাচন পরিচালনায় সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। নিজেরা খালি চোখে দেখলেই বুঝতে পারবেন ’৯৬ সালের আগে বা ২০০৯ সালের আগে চট্টগ্রাম কেমন ছিল, আর এখন কেমন। কেবল চট্টগ্রাম বলে নয়; সারাদেশেই তার সরকার এই উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। দেশের কল্যাণে কাজ করলে যে করা যায় সেটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
কোন দেশের উন্নয়নে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে জনসমর্থন সেটা জনগণের কাছ থেকে পাওয়ায় তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এখানে জনগণের সমর্থনটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, যেটা আমরা পাই। তাঁর সরকারের পঞ্চবার্ষিক ১০ ও ২০ বছর মেয়াদী প্রেক্ষিত এবং ডেল্টা মহাপরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ এক দেশ- সেই পরিকল্পনাটাও আমরা দিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জিতে মেয়র হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়ে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে তিন লাখ ভোটে হারান তিনি।