মহামারি ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ১০ প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে দেশ

admin
জানুয়ারি ৮, ২০২১ ৩:৪২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

তের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক চক্রের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি বাংলাদেশের আত্মসম্মানের ব্যাপার হয়ে পড়েছিল। এই সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অর্থায়নের কথা ছিল। তবে বিএনপি-জামায়াতের লবিস্টরা ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে বিরত করে সেতুর নির্মাণ থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। খালেদা জিয়া সেসময় বিভিন্ন সমাবেশে বারবার বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আর পদ্মা সেতু বানাতে পারবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এবং আন্তর্জাতিক আদালতে শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয় যে, এই প্রকল্পে যখন দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল তখন কোনো অর্থই ছাড় হয়নি, তাই এই অভিযোগকে অবান্তর বলে অভিহিত করে কানাডার আদালত। সব ষড়যন্ত্র জয় করে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি যুক্ত দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রায় ৩ কোটি মানুষ। দ্বিতল এই সেতুটির ওপরের তলায় চার লেনে বাস এবং নিচ তলা দিয়ে রেল চলাচল করবে। নদীর খরস্রোত ও পলিমাটির কারণে এই সেতুর একেকটি পাইল ১২০ মিটার থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীর করতে হয়েছে, যা বিশ্বে নজিরবিহীন। এই সেতু শত বছরের বেশি সময় স্থায়ী হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন পর্যন্ত এই সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৮২ শতাংশের বেশি।
মেট্রো রেল:
করোনার কারণে কয়েকমাস বন্ধ থাকলেও এখন আবারও পুরোদমে চলছে দেশের প্রথম মেট্রো রেলের কাজ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭৮ শতাংশ এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেল চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করা যাচ্ছে। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ১৬টি স্টেশন হবে এবং মেট্রো রেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
এক্সপ্রেসওয়ে:
ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া (পদ্মা সেতুর এই প্রান্ত) পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং পদ্মার ওপার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের সংযোগস্থান ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের পদ্মা সেতু। এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে এই ৫৫ কিলোমিটার দূরত্ব পার হতে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল এই ৫৫ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন সড়কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি এখন পুরোদমে চালু রয়েছে। তবে পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর এর শতভাগ সুফল পাবে মানুষ।
বঙ্গবন্ধু টানেল:
কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মাণাধীন এই টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম টানেল। ৩.৩ কিলোমিটার লম্বা এই টানেলের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নির্মিত এই টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম শহর চীনের সাংহাই নদীর মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেল গড়ে উঠবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পাশাপাশি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। এই টানেলের ৬১ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ:
রাজধানী ঢাকা ও কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি রেলসংযোগের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত আরও ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। দোহাজারী-কক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ এখন দৃশ্যমান। বাকি কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে সরাসরি রেলপথে কক্সবাজারে যাওয়া যাবে। এই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প:
কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হবে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযু্ক্তিতে। নভেম্বর পর্যন্ত ভৌত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪০ ভাগ। মাতারবাড়ী ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র:
রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনার রূপপুরে, যেখানে দুটি ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এগিয়ে চলছে এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৩০ ভাগেরও বেশি শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালের অক্টোবরে উৎপাদনের সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৬০ বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র:
২০২১ সালে উদ্বোধনে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ। মোংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে রামপালে প্রায় ১৮৩৪ একর জমির ওপর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কারণে রামপাল প্রকল্প পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং নিকটবর্তী সুন্দরবনে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনবে দাবি করে পরিবেশবাদী বহু সংগঠন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তবে যে ধরনের প্রযুক্তি রামপালে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে সুন্দরবনের কোনও ক্ষতি হবে না বলে নিশ্চিত করছে সরকার।
পায়রা বন্দর:
পায়রা বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি রেল ও সড়ক পথের যোগাযোগ উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত দেশের প্রথম চার লেনের আরসিসি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২১ সালেই আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে পুরোপুরি চালু করা সম্ভব বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র:
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় মে মাসে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এটি ছিল বড় সুখবর।