মঙ্গলবার ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করবেন মোদী

admin
মার্চ ৯, ২০২১ ১০:০২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী-১ সেতু উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ২৬ মার্চ দুদিনের সফরে ঢাকা আসছেন। ঢাকায় দুই দিনের সফর হচ্ছে গত ১৫ মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রথম বিদেশ সফর।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মোদীর আসন্ন সফরে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে বড় কোনো চুক্তি হওয়ার খবর আপাতত নেই। তবে তিনি বাংলাদেশে দুদিন ব্যস্ত সময় কাটাবেন। এই দুদিনে তিনি গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি এবং বরিশালের শিকারপুরে শক্তিপীঠে যেতে পারেন। ওড়াকান্দি হচ্ছে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা কয়েক কোটি মতুয়ার কাছে সম্প্রদায়টির প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের ‘লীলাক্ষেত্র’। ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের আদি ধর্মস্থানে নরেন্দ্র মোদি এমন একটা সময়ে যেতে পারেন, যার একদিন পর থেকেই শুরু হবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন। সবমিলিয়ে মোদীর এবারের ঢাকা সফরের একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ভোট।
তবে ঢাকা সফরের ১৬ দিন আগেই মঙ্গলবার (৯ মার্চ ) দুপুরে মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খাগড়াছড়ির রামগড়ে ভারতীয় টাকায় নির্মিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করবেন। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সঙ্গে বৈঠকে রামগড়- সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফেনী নদীর ওপর নির্মাণাধীন ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ নামে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন। কিন্তু মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সেতু উদ্বোধনের বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি পায়নি।
জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সল সোমবার সন্ধ্যায় ভোরের কাগজকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করবেন বলে জেনেছি। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি। সেতুটি দুদেশের মধ্যে হলেও এর নির্মাণ ব্যয় করেছে ভারত সরকার। বাংলাদেশ শুধু নিজের অংশে সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহনের টাকা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতীয় সময় মঙ্গলবার ( ৯ মার্চ) দুপুর ১২টায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘মৈত্রী সেতু’র উদ্বোধন করবেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরার একাধিক পরিকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
‘মৈত্রী সেতু’টি ফেনীর ওপর নির্মিত হয়েছে। এই নদীটি ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। ‘মৈত্রী সেতু’ নামটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক। এই প্রকল্পের জন্য খরচ হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। ১.৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি ভারতের সাবরুমের সঙ্গে বাংলাদেশের রামগড়কে যুক্ত করেছে। এই সেতু উদ্বোধনের ফলে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের যাত্রা শুরু করবে। এই সেতু উদ্বোধনের সঙ্গে ত্রিপুরার সাবরুম থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠার পাশাপাশি ‘উত্তর পূর্বের প্রবেশ দ্বার’ হয়ে উঠবে। সেতুটির মাধ্যমে সরাসরি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে ত্রিপুরা।
সেতু উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী সাবরুমে সুসংহত চেক পোস্ট তৈরির জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এটি দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী চলাচল সহজ করে তুলবে। এমনকি উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির উৎপাদিত পণ্য সামগ্রির জন্য নতুন বাজারের সুযোগ তৈরি হবে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নির্বিঘ্নে যাত্রী চলাচল ক্ষেত্রে সহায়তা দেবে। এই প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে ভারতের স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর জন্য ব্যয় হচ্ছে ২৩২ কোটি টাকা।
সেতুর ভারতীয় প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানিয়েছেন, গত ১৩ জানুয়ারি সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়। এ সেতুর মোট পিলার ১২ টি। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ ৮টি ও ভারতের অংশে ৪টি। সেতু থেকে ২৪০ মিটার এপ্রোচ রোড নির্মাণ করে রামগড়-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে সাথে এবং ওপারে সেতু থেকে প্রায় ১২০০ মিটার এপ্রোচ রাস্তা নবীনপাড়া-ঠাকুরপল্লী হয়ে সাব্রুম-আগরতলা জাতীয় সড়কে যুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের দুই লেনের এ সেতুর দুপাশে রয়েছে ফুটওয়ে।
এদিকে, বাংলাদেশ সফরের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথম ভারতের নীতির ‘গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ’ হিসাবে বাংলাদেশকে বর্ণনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী সফরের প্রস্তুতি নিতে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্কর ঢাকা সফর করেছেন এবং বলেছেন, এতে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরো উন্নতি ঘটবে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর অবশ্যই অত্যন্ত স্মরণীয় হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত ডিসেম্বরে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ভারত যখন এগুলি তৈরি করে তখন ভ্যাকসিনগুলি বাংলাদেশের কাছে সরবরাহ করা হবে এবং ভ্যাকসিন উৎপাদনে অংশীদারিত্বের প্রস্তাবও দিয়েছেন। ওই শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন যে ভারত আমাদের সত্যিকারের বন্ধু। আসন্ন সফরে বহু বিষয় আলোচনা হবে। তবে বড় কোনো চুক্তি নাও হতে পারে।