ভাসানচরে যাচ্ছে আরও তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা

admin
জানুয়ারি ২৮, ২০২১ ১২:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তৃতীয় ধাপে ভাসানচরে যাচ্ছে আরও তিন সহস্রাধিক রোহিঙ্গা। চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে শুক্র ও শনিবার তাদের ভাসানচর নেওয়া হবে। এর আগে দুই ধাপে ভাসানচরে গেছে ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গা। তারা এরই মধ্যে ভাসানচরে গিয়ে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করছে। তাদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়েই অন্যরা ভাসানচরে যাচ্ছে। এদিকে ভাসনচরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার সহায়ক ও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ শুরু করেছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)। গতকাল বুধবার এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

ভাসানচরের ‘আশ্রয়ণ-৩’ নামে প্রকল্পটির পরিচালক কমডোর আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী সমকালকে জানান, তৃতীয় ধাপে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গার ভাসানচরে আসতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আগে যেভাবে রোহিঙ্গাদের আনা হয়েছে, একইভাবে শুক্র ও শনিবার তাদের নতুন ঠিকানায় স্থানান্তর করা হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে যারা এসেছিল, তাদের কাছে ভাসানচরের বাস্তব পরিস্থিতি জেনে অনেক রোহিঙ্গা এখানে আসতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এর আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এর পর ২৯ ডিসেম্বর আরও ১ হাজার ৮০৮ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পরিবারের ১০ জন নতুন অতিথি এসেছে। নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে ভাসানচরে বর্তমানে ৩ হাজার ৭৬১ রোহিঙ্গার বসবাস। তাদের মধ্যে ৩০৪ জন পুরোনো। তৃতীয় দফায় তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা স্থানান্তর হলে সেখানে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়াবে সাত হাজারের কাছাকাছি।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু :ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার সহায়ক ও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)। গতকাল বুধবার বিআরডিবির মহাপরিচালক সুপ্রিয় কুমার কুণ্ডু ভাসানচরে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আশ্রয়ণ-৩ এর প্রকল্প পরিচালক কমডোর আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, বিআরডিবির পরিচালক (পরিকল্পনা) এসএম মাসুদুর রহমান, পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. সাঈদ কুতুব প্রমুখ।

প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ব্যাচে ৫০ জন; ৫টি গ্রুপে ২৫০ জনকে পাঁচ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে ভাসানচরে স্থানান্তর করা সবাইকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। এর আওতায় বিআরডিবি কর্তৃক প্রতিটি পরিবার থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারীকে সুফলভোগী হিসেবে নির্বাচন করা হবে। প্রত্যেক সুফলভোগীকে প্রথমে জীবনযাত্রার সহায়ক ও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরে প্রশিক্ষণার্থীদের চাহিদা মোতাবেক শাক-সবজি, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশুপালন, মৎস্য চাষ, কুটির-সুচিশিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যা থেকে তারা আয় করতে পারবে।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোশারফ হোসেন জানান, ‘ভাসানচরের উদ্দেশে কক্সবাজার শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গারা বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রা করবে। চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে শুক্রবার দুপুরে তৃতীয় দলটির একটি অংশ ভাসানচরে পৌঁছবে। সেখানে আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি, উখিয়ার কুতপালং ক্যাম্প-২ ইস্টের রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (ইনচার্জ) মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, ‘তার শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ১৩০ রোহিঙ্গা পরিবারের ৫৫৯ জন ভাসানচরে যেতে প্রস্তুতি শেষ করেছে। তারা বৃহস্পতিবার ভাসানচরে উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করবে। তারা চট্টগ্রাম থেকে শুক্রবার ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেবে।’

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) খোরশেদ আলম খান জানান, ‘স্বেচ্ছায় রাজি আরও ৩ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে কক্সবাজার থেকে সাময়িকভাবে স্থানান্তরে ভাসানচরে এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে এক হাজার ৪৪০টি ক্লাস্টার হাউস ও ১২০টি শেল্টার স্টেশন। গুচ্ছগ্রামের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে এসব ক্লাস্টার হাউস। প্রতিটি ক্লাস্টার হাউসে ১২টি গৃহ। প্রতি গৃহে ১৬টি রুম। একেক রুমে চারজনের থাকার ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য শতভাগ প্রস্তুত ভাসানচর। আধুনিক বর্জ্য ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনা, বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে। বর্তমানে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ অস্থায়ীভাবে ভাসানচরে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ‘আশ্রয়ণ-৩’ নামে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। চরটি বসবাসের উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন ও দ্বীটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।