ইউরোপের দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এরই মধ্যে আঘাত হেনেছে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। দেশেও বাড়ছে সংক্রমণের হার। এ অবস্থায় আসন্ন শীত মৌসুমে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কঠোর হচ্ছে সরকার। প্রথম ঢেউয়ের ভুলত্রুটি বিশ্লেষণ করে প্রণয়ন হচ্ছে কর্মপরিকল্পনাও। এর অংশ হিসেবেই একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়নে হার্ডলাইনে যাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে বাংলাদেশে এলে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও সব বিদেশিকে যেতে হবে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে। ১৪ দিনের সতর্কতামূলক এই ব্যবস্থার সব খরচও বহন করতে হবে নিজেদের। এটি বাস্তবায়নের জন্য রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোর সঙ্গে চুক্তিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অন্যদিকে বিদেশ ফেরত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে সরকারি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র। সেখানে সরকারই তাদের খরচ বহন করবে। তবে প্রবাসীদের কেউ তারকা হোটেলে কোয়ারেন্টিন করতে চাইলে নিজেকেই বহন করতে হবে সব খরচ। আর কোয়ারেন্টিন এড়াতে কারও পক্ষে যদি তদবির আসে, তা হলে উভয়ের বিরুদ্ধেই আইনিব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় করণীয় সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট আট মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, দেশের সব বন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্নের পর থাকবে চুক্তিবদ্ধ হোটেল ও কোয়ারেন্টিন সেন্টারের তালিকা। সে অনুযায়ী আগতরা নিজেদের পছন্দমতো হোটেলে উঠতে পারবেন। ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন সম্পন্নের পর রিয়েল টাইম পিসিআর টেস্ট হবে। তাতে করোনা নেগেটিভ এলেই কেবল মিলবে মুক্তি। যদি পজিটিভ আসে তা হলে আরও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন ও চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন ও পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। বিমানবন্দরে করোনার সার্টিফিকেটের সত্যতা যাচাইয়ে বসছে বার কোড স্ক্যানার। খুব সহজেই এতে বোঝা যাবে সার্টিফিকেট আসল না নকল। পাশাপাশি দেশের সব বন্দরে করোনা ব্যবস্থাপনা আরও সুন্দর করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোতে জনবল বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভাইরাসটির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও।
এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ জন্য ভালোমানের হোটেলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে বিদেশিদের নিজ খরচে থাকতে হবে। আর প্রবাসী বাংলাদেশিরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। আবার ইচ্ছে করলে নিজ খরচে হোটেলেও থাকতে পারবেন। তা ছাড়া বিমানবন্দরে বার কোড স্ক্যানার বসছে, যাতে করে সহজেই সার্টিফিকেটের সত্যতা যাচাই করা যায়।’
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) তথ্যানুযায়ী, দেশে আগস্টের তুলনায় করোনা সংক্রমণের হার সেপ্টেম্বরে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। আর অক্টোবরে তা বেড়ে হয়েছে একের ওপরে, ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও ক্রমে বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।