বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার এক যুগ

admin
ডিসেম্বর ১৩, ২০২০ ৪:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বিনির্মাণের এক যুগ পেরিয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নেগড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ। শহুরে জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে পিছিয়েপড়া দুর্গম প্রান্তিক জনপদেও লেগেছে ডিজিটাল স্পর্শ। ডিজিটাল এই কর্মযজ্ঞে নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদ ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেছিলেন। এ রূপকল্পের মূল উপজীব্য ডিজিটাল বাংলাদেশ। ওই দিনটিকেই বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস হিসেবে উদযাপন করছে।
‘যদিও মানছি দূরত্ব, তবুও আছি সংযুক্ত’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ দেশব্যাপী উদযাপিত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২০। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সকাল ১০টায় হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। আর রাতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ১২ বছর নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হবে। সেমিনারে প্রধান অতিথি ও কি-নোট স্পিকার হিসেবে ডিজিটাল পস্নাটফর্মে সংযুক্ত
থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ।
এ সম্পর্কে সম্প্রতি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু আওয়ামী লীগের নয়, ১৭ কোটি মানুষের। ঘরে ঘরে প্রতিটি মানুষ ভোগ করছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা। ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে দেশের জনগণ
করোনা মহামারিতেও সংযুক্ত থাকতে পেরেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আদালত, সরবরাহ ব্যবস্থা- এমনকি বিচারিক কাজ সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।’
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলার। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে এ স্বপ্নের বাস্তবায়নে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, সমুদ্রসহ প্রায় সব খাতে নানা উদ্যোগ ও কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করেন। এর মধ্যে বেশ কিছু খাতে তার উদ্যোগ ছিল গভীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত এর উজ্জ্বলতম একটি দৃষ্টান্ত।
১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের বিস্ময়কর আবিষ্কার বিশ্বে ডিজিটাল বিপস্নবে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হয়ে উঠে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। বঙ্গবন্ধু তাই ডিজিটাল বিপস্নবে শামিল হওয়ার দূরদর্শী চিন্তা থেকে সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমেই তিনি জাতিসংঘের ১৫টি সংস্থার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভের চেষ্টা চালান। বঙ্গবন্ধুর অদম্য প্রচেষ্টায় ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্যপদ লাভ করে। ডিজিটাল বিপস্নবে শামিল হওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর গৃহীত ও বাস্তবায়িত উদ্যোগগুলোই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল প্রেরণা। প্রকৃতপক্ষে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার আধুনিক রূপ এই ডিজিটাল বাংলাদেশ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ কর্তৃক সরকার গঠনের পরপরই প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়। ১২ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশের চারস্তম্ভ -কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্মেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশন -ঘিরে নেওয়া অধিকাংশ উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটে।
এরই মধ্যে দেশের ৩ হাজার ৬৫০টি ইউনিয়ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে। আরও ১৫০টি ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল লাইনের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া দেশের ২৮টি স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে ২৮টি হাইটেক পার্ক। ভবিষ্যতে এ পার্কগুলো হবে ডিজিটাল অর্থনীতির লাইফ লাইন। ইতোমধ্যে নির্মিত ৩টি হাইটেক ও সফটওয়্যার পার্কে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দেশে একদিকে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যাও হু হু করে বাড়ছে। বিশেষ করে করোনার এই সময়ে তা আরও বেশি করে বাড়ছে। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া দেশে ৫ হাজার ৮৬৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ছয়শ’রও বেশি সেবা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের এলিট ক্লাবের সদস্য হয়। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবা পৌঁছে গেছে জনগণের দোরগোড়ায়। স্যাটেলাইটের মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইট ও অ্যান্ড্রয়েড টিভি, স্মার্টফোন, গেজেট, পঞ্চম প্রজন্মের ৫জি মোবাইল নেটওয়ার্ক, ওয়াইফাই ইন্টারনেট সম্প্রচার ও দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ ও ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তিতে এনেছে দুর্দান্ত গতি।
মানুষের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য চালু রয়েছে জাতীয় তথ্য-বাতায়ন। এই তথ্য-বাতায়নের ৪৫ হাজার ওয়েবসাইট ও সরকারি বিভিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ‘জাতীয় তথ্য বাতায়নে’ ভিজিট করে যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া গুগল পেস্ন স্টোরে রাখা হয়েছে ৬০০ মোবাইল অ্যাপিস্নকেশন। প্রতারণা বা সহিংসতার শিকারে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে পুলিশের জরুরি সেবা। মৎস্য ও পশুসম্পদ তথ্যকেন্দ্র এখন হাতের মুঠোয়। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সার্বক্ষণিক চালু রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদভিত্তিক তথ্যকেন্দ্র।
বিগত এক যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিস্ময়কর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে মাতৃ ও শিশু মৃতু্য হ্রাসে অনবদ্য ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশকে মর্যাদাপূর্ণ দ্য গেস্নাবাল হেলথ অ্যান্ড চিলড্রেন্স অ্যাওয়ার্ড ও ডিজিটাল সিস্টেম শিক্ষার সম্প্রসারণে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সাউথ সাউথ কোঅপারেশন ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।