চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি মার্কিন গবেষক অধ্যাপক ড. রুহুল আবিদ ও তার অলাভজনক সংস্থা হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হায়েফা)। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবে তাকে মনোনীত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিন-ফিলিপ বেলিউ। এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ২১১ ব্যক্তির মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ড. আবিদও একজন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলপার্ট মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক তিনি। তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠান হায়েফা কাজ করেছেন সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে।
ডা. আবিদ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক ও জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোলিকুলার বায়োলজি ও জৈব রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০১ সালে তিনি হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে ফেলোশিপ শেষ করেন। তিনি ব্রাউন গ্লোবাল হেলথ ইনিশিয়েটিভের একজন নির্বাহী সদস্যও। তার সংস্থা হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিতদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে।
রানা প্লাজার দুর্ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম একটি দুর্যোগ। গোটা পৃথিবীর মানুষকেই নাড়া দিয়েছিল ঘটনাটি। তেমনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ড. রুহুল আবিদকে ঘটনাটি বিশেষভাবে নাড়া দেয়। তাই তিনি ভেবেছিলেন পোশাক শ্রমিকদের কল্যাণে কিছু একটা করা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। পরিকল্পনা করলেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। গত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩০ হাজার পোশাকশ্রমিককে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে তার সংস্থা হায়েফা। এছাড়াও সংস্থাটি প্রায় ৯ হাজার সুবিধাবঞ্চিত নারী ও পোশাকশ্রমিকের জরায়ু ক্যানসার স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা সেবা এবং কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেড় লাখেরও বেশি মানুষকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, রক্তস্বল্পতা, যক্ষ্মা ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার মতো দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক জটিলতা ও রোগের ঝুঁকির মধ্যে আছেন কিনা তা যাচাই করে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে হায়েফা প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালে হায়েফা নিয়ে আসে ডিজিটাল উদ্ভাবন ‘নীরোগ’। এটি একটি সৌরবিদ্যুৎ পরিচালিত মোবাইল ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড (ইএমআর) সিস্টেম। ২০১৩ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ডা. রোজমেরি দুদার সঙ্গে ঢাকা, গাজীপুর এবং শ্রীপুরের তিনটি কারখানায় পোশাক কর্মীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেন ড. আবিদ। বিশ্বে যখন করোনার আঘাত এলো তখনই হায়েফা কাজ শুরু করে দেয় রোহিঙ্গাদের নিয়ে। করোনার সংক্রমণ রোধে বর্তমানে দুটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সংস্থাটি।
এ বছরের শুরুর দিকে এসে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি আর আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা হোপের সঙ্গে মিলে কাজ শুরু করে হায়েফা। করোনা মোকাবিলায় পিপিই, কেএন-৯৫ মাস্ক, পালস অক্সিমিটার ও ইনহেলার সংগ্রহ করতেও কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ড. আবিদ এবং হায়েফা ২০১৮ সালে গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জেস কানাডার ‘স্টারস ইন গ্লোবাল হেলথ’ পুরস্কারও পেয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ২১১ ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন ড. আবিদ।