‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দুই মাসের মধ্যে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু মস্কো সফর করেন। ওই সময় পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধন হয়। তাই রাশিয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে তার জনগণের স্বাধীনতা এবং আমাদের দেশের সত্যিকারের বন্ধু ও স্বাধীনতাপাগল এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং একনিষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে স্মরণ করে।’
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন অনন্য বিশ্ব নেতা হিসেবে সব সময় রাশিয়া স্মরণ করে বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে এক ভিডিওবার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু তার জনগণের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন উল্লেখ করে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এবং পরে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য লড়েছেন। দেশের প্রথম ও প্রধান ব্যক্তি হিসেবে ১৯৭২ সালে মস্কো সফরে গিয়েও তৎকালীন সৌভিয়েত নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও তিনি (বঙ্গবন্ধু) তার ছাপ রাখেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দুই মাসের মধ্যে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু মস্কো সফর করেন। ওই সময় পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধন হয়। তাই রাশিয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে তার জনগণের স্বাধীনতা এবং আমাদের দেশের সত্যিকারের বন্ধু ও স্বাধীনতাপাগল এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং একনিষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে স্মরণ করে।’
বঙ্গবন্ধুর সেই মস্কো সফরকে স্মরণ করে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, এটি তখন সমতা, পারস্পরিক সম্মান এবং একে অপরের আগ্রহের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতীক হয়ে ওঠে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে ল্যাভরভ বলেন, ‘পূর্ব বাংলার জনগণ নিজের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারের জন্য সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েছিল। আমরা সে সময় তাদের পাশে ছিলাম। সে সময় রাশিয়া বাংলাদেশকে যথেষ্ট রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামো ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারেও পাশে দাঁড়িয়েছে।’
রাশিয়া সব সময়ই যে কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশের পাশে আছে জানিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করার জন্য সোভিয়েত নেভির একটি বিশেষ দল পাঠানো হয়েছিল। যাদের অনেকেই আর দেশে ফেরত যেতে পারেননি। এটা ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ ত্যাগ। বাংলাদেশও রাশিয়ার এই ত্যাগ ও সমর্থনকে মনে করেছে, মনে রেখেছে, যা প্রশংসার যোগ্য।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। এর পাশাপাশি এখনকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধেও ঢাকা যুদ্ধ করছে। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এ দেশের সব সাফল্যকে স্বাগত জানাই।
‘কয়েক বছর ধরে আপনাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। ধীরে ধীরে উন্নত দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছেন, আন্তর্জাতিক মহলে খ্যাতি অর্জন করছেন। এটাকে আমরা আমাদের বিজয়ও মনে করি। তাই দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চালানো আপনাদের লড়াইসহ বর্তমান বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাশিয়া সব সময়ই বাংলাদেশের পাশে সক্রিয় থাকবে।’
সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। গত বছর করোনভাইরাস মহামারি সত্ত্বেও আমাদের দুই দেশের মধ্যে টার্নওভার প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে; যা আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে সর্বকালের রেকর্ড চিহ্ন ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।’
নতুন নতুন যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়া প্রস্তুত উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক সংলাপ এবং পারস্পরিক কার্যকর সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে রাশিয়া প্রস্তুত। আমি বিশ্বাস করি, বিদ্যমান বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমাদের নাগরিকদের সুবিধার জন্য আরও দৃঢ় হবে।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ২০২৩-২৪ নাগাদ শেষ হবে উল্লেখ করে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার একটি বড় অর্থনেতিক অংশীদার বাংলাদেশ এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ২৪০ কোটি ডলারের।
ল্যাভরভ বলেন, বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।