বছরের প্রথম দিনে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মৌ মৌ করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা হাতে পায় ঝকঝকে মলাটের নতুন বই। করোনা মহামারীর আঘাতে এ বছর বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে উৎসব না হলেও নির্ধারিত দিনে শিশুদের হাতে পৌঁছাবে নতুন বই। সময়মতো বই পৌঁছাতে দিনরাত খাটছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, করোনা মহামারী প্রভাব ফেলেছে আমাদের জীবনযাত্রায়। কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে আমরা যথাসময়ে মানসম্মত বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারব। ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই বেশির ভাগ জেলা-উপজেলায় পৌঁছে গেছে নতুন বই। বাকিগুলো আশা করি এ মাসের মধ্যে পৌঁছে যাবে। আগামী বছরের প্রথম দিনেই আশাকরি শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে নতুন বই। এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরেরমতো এবারও ইংরেজি বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে নতুন বই পাবে প্রি-প্রাইমারি, প্রাইমারি ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। পয়লা জানুয়ারি ২০২১ সেশনের জন্য এ বই বিতরণ করা হবে। যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে কাজ করছে এনসিটিবি। সময়মতো বই পৌঁছাতে কাজ করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবির কর্মকর্তারা। টানা ১১ বছর ধরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কর্মকতারা প্রিন্টিং প্রেসে এবং বই পৌঁছানোর কাজে জোর তদারকি করছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ বই দেশের জেলা উপজেলায় পৌঁছে গেছে। এ বছর ১৫১টি প্রিন্টিং প্রেসে ৩৫ কোটি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৪ দশমিক ৪১ কোটি বই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ও ১০ দশমিক ৫৪ কোটি বই প্রাইমারি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হচ্ছে। প্রতিবছর পয়লা জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া হলেও এ বছর করোনায় কোনো বই উৎসব হচ্ছে না। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে এ বছর বই উৎসব করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যথাসময়ে আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দেব। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর জানুয়ারির ১ তারিখে এ বই উৎসব করে আসছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৩৩১ দশমিক ৩৮ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর বিনামূল্যের বই দরিদ্র অভিভাবকদের জন্য বড় ধরনের স্বস্তি নিয়ে আসে। সরকারের পক্ষ থেকে এ সহায়তায় তাদের আর্থিক কষ্টের বোঝা অনেকটাই লাঘব হয়। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে উপবৃত্তি থেকে শুরু করে বিনামূল্যে বই দেওয়ার মতো কর্মসূচি পরিচালনা করছে সরকার। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রবণতা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। করোনায় শিশুদের নিরাপদে রাখতে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই এবার বই উৎসবের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় হয়তো কিছুটা পরিবর্তন আসবে। তবে এ উৎসবে ঘটবে না কোনো ছন্দপতন। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে চলছে নিরলস প্রচেষ্টা।