প্রধানমন্ত্রীর যত উদ্ভাবনী উদ্যোগ:

admin
মে ১১, ২০২১ ৩:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই দুঃসময়ে দরজায় কড়া নাড়ছে খুশির ঈদ। গত বছর এই ঈদ এসেছিল মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। সে সময় ঈদের জামাত খোলা জায়গায় হয়নি। শুধু মসজিদে সীমাবদ্ধ ছিল। এবারও তাই হবে। করোনা সংক্রমণের প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নজর ছিল সবদিকে। স্বাস্থ্যসুরক্ষা থেকে শুরু করে মানুষের জীবন ও জীবিকা। লকডাউনের মধ্যে যেন সাধারণ মানুষ কোনো কষ্ট না পায় তার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল নগদ আর্থিক সহায়তা।
গত বছর এই মে মাসেই আঘাত হানে ‘সুপার সাইক্লোন’ আম্ফান। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বিনামূল্যে সার, বীজ ও নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। করোনার সঙ্গে আম্ফান মোকাবিলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা করে জায়গামতো বাতা পৌঁছে দেন। করোনার প্রথম ঢেউয়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হন তাদের জন্য নগদ সহায়তার পাশাপাশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেওয়া হয়। আর এসব প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী উদ্যোগ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ^জুড়ে করোনা যখন সবাইকে বিচলিত করে তোলে, সে সময় মনোবল শক্ত করে নিজের উদ্ভাবনী উদ্যোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। আর এতেই বিশ^বাসী অবাক হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২১টি প্রণোদনা ঘোষণা করলেন। আর সেই প্রণোদনা প্যাকেজের পরিমাণ ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। এ ছাড়াও ঋণ, নগদ সহায়তা ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলো। আর সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এই প্রণোদনা প্যাকেজে কেউ বাদ যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে দেওয়া হয় ৪০ হাজার কোটি টাকা। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতার জন্য দেওয়া হয় ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পসহ মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা। রফতানি খাতে সহায়তা জন্য ছিল ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি ছিল অবশ্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের জন্য।
করোনায় চিকিৎসক আর নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা করেছেন। এখনও করে যাচ্ছেন। এসব চিকিৎসক ও নার্সের জন্য সম্মানী বাবদ দেওয়া হয় ১০০ কোটি টাকা। কর্মহীন দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার। করোনার প্রথম ঢেউয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহ করা হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এই নগদ টাকা এবার দ্বিতীয় করোনার ঢেউয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিদেশ থেকে যারা ফেরত এসেছে সেই প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পে যেসব শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজ রাখা হয়। এমনকি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ করোনাকালে যা কিছু সহায়তা পরিকল্পনা সব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের উদ্যোগকে কোনো কোনো দেশ অনুসরণ করেছে। সারাবিশ^ যখন করোনায় অর্থনৈতিক দিক থেকে বিপর্যস্ত, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে চিন্তিত, ঠিক সে সময় জাতিসংঘ উল্লেখ করে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশে^র অন্য দেশের তুলনায় এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে থাকবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী উদ্যোগ অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশকে উন্নত বিশে^র সারিতে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করা হয়। আর এই উদ্ভাবনী উদ্যোগের পথিকৃৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জিডিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা বিশে^র কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তার দূরদর্শিতার ফলে আজ হাতের কাছে সবই যেন চলে এসেছে। করোনাকালে ডিজিটাল কার্যক্রম মানুষের কত উপকারে এসেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনলাইনে খাবার অর্ডার দেওয়া, কাপড়, বই অর্ডার দিয়ে সময়মতো ঘরে ঘরে পৌঁছানো যেন এক বিস্ময়কর ব্যাপার। গ্রামে বসবাসকারী এক নারী নিজের মোবাইলে শহরে থাকা স্বামীর উপার্জিত টাকা নিমেষেই পেয়ে যাচ্ছেন। সবই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে। করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ। ছেলেমেয়েদের ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। বিভিন্ন মিটিং হচ্ছে অনলাইনে, জুমে। এটা কি কখনও আগে চিন্তা করা গেছে? এই ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্ভাবনী উদ্যোগ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্ভাবনী উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম অগ্রাধিকার পাওয়া বিশেষ উদ্যোগ। বাংলাদেশে বিভিন্ন কার্যক্রম এখন ডিজিটালে রূপান্তর হয়েছে। ফলে মানুষ তার সেবা অল্প সময়ের মধ্যে হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছে। এর সুফল এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তন হতে যাচ্ছে। যারা তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদান রাখবে তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হবে। এই পুরস্কার শুধু অনুপ্রেরণার জন্য নয়, উৎসাহ-উদ্দীপনা দেওয়ার জন্য চালু করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় উদ্ভাবনী উদ্যোগ হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। যাদের কোনো ঘরবাড়ি নেই, জমি নেই তাদের ঘরবাড়ি দেওয়ার জন্যই এ প্রকল্প। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রায় ৭০ হাজার আশ্রয়হীন ঘরবাড়ি নির্মাণ করে তা হস্তান্তর করেছেন। শিগগিরই আরও ঘরবাড়ি হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। ঘরবাড়িহীন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এ উদ্যোগ বেশ প্রশংসিত হয়েছে। নদীভাঙনে যারা নিঃস্ব হয়েছে, ঝড়ে কিংবা বন্যায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাদের জন্য এই আশ্রয়ণ প্রকল্প আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
‘আমার বাড়ি আমার খামার’ একটি প্রকল্প। কিন্তু এই প্রকল্পটি যার মাথা থেকে এসেছে তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার একটি প্রিয় উদ্ভাবনী উদ্যোগ এখন সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকে ইতোমধ্যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছেন। এটি বিদেশও বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এ ধরনের মডেলের কার্যক্রম বাংলাদেশে এর আগে কখনও হয়নি। এই প্রকল্পের আওতায় বেকার অনেক তরুণ-তরুণী আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছে। যারা অসহায়, যাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে কিন্তু কোনো কাজ করতে পারে না তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী উদ্যোগ হচ্ছেÑ সামাজিক নিরাপত্তা। প্রতিবছর বাজেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয় শুধু এ খাতে। বিধবা থেকে শুরু করে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যক্তাসহ আরও বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য এই সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচি যেন ঠিকমতো চলে তার দেখভাল করার জন্য একটি জাতীয় পর্যায়ে কমিটি কাজ করছে। তাদের চলার জীবন যেন সুষ্ঠু হয়, মসৃণ হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী এ উদ্যোগ নেন।
গ্রামগঞ্জের মানুষ যেন তাদের হাতের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পায়, সে মনোভাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি মানবিক উদ্যোগ হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশ যেন হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখাই এই উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এখন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে এই কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা যেন সেখানে অবস্থান করে সেবা দিতে পারেন তারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই উদ্যোগে গ্রামের সাধারণ মানুষ খুশি। কারণ তাদের এখন সামান্য চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হয় না।
এখন গরমকাল। এই গরমে আগে ঘন ঘন লোডশেডিং হতো, মানুষ হাপিত্যেশ করত। কিন্তু এখন লোডশেডিং শব্দটি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এর একমাত্র কারণ প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঘরে বিদ্যুতের উদ্ভাবনী উদ্যোগ। করোনাকালে বিদ্যুতের এই উদ্যোগে কোনো ভাটা পড়েনি। বরং এই বিদ্যুৎ দিয়ে এখন দ্বীপগুলোকে আলোকিত করার উদ্যোগ চলছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, এদেশে কেউ আর বিদ্যুৎবিহীন বসবাস করবে না। সবার ঘরে আলো জ্বলবে।
শিক্ষাসহায়তা প্রধানমন্ত্রীর আরও একটি উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনী উদ্যোগ। শিক্ষার আলোকে সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এ উদ্যোগ। এই সহায়তা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই উপকার পাচ্ছে। বছরের শুরুতে বিনামূল্যে নতুন বই পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ব্যতিক্রমী ও সফল উদ্যোগ। বছরের শুরুতে প্রতিটি শিক্ষার্থী নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা থাকে।
নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী মনেপ্রাণে বিশ^াস করেন। এ কারণে দেখা যায়, জাতীয় সব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন নারীর ক্ষমতায়নের পালাবদল হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সর্বত্র নারীর মূল্যায়ন হচ্ছে। পদায়নের ক্ষেত্রেও নারীরা এখন খুব একটা পিছিয়ে নেই। আর যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী উদ্যোগে নারীর ক্ষমতায়ন যুক্ত হয়েছে।
দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার কোনো শেষ নেই। একই সঙ্গে দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। আর সে চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আরও একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ বিনিয়োগ। প্রায় ১১ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় অর্থনৈতিক অঞ্চল। যেখানে অপার বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে দেশি ও বিদেশিদের। পাশাপাশি শেখ মুজিব শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে ১৩১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। আগামী কয়েক বছরে এখানে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ১ অক্টোবর দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরা। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিনিয়োগ অবস্থা সম্পর্কেও অবহিত করা।
প্রধানমন্ত্রী সবসময় পরিবেশ সুরক্ষার ওপর বিশেষ নজর রাখছেন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাতে বাংলাদেশ কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা বিশ^বাসীকে অবহিত করছেন। তবে বিশে^র দিকে না তাকিয়ে তিনি নিজেই জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল গঠন করেছেন। যে তহবিলের লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেশের বাইরে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন, যা ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। তাই পরিবেশ সুরক্ষা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
৩। সামাজিক সুরক্ষায় এবার বরাদ্দ অনেক বাড়ছে
রাজধানীর তেজগাঁও বস্তিতে রহিমা খাতুন বসবাস করেন অনেক বছর ধরে। ১৫ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। চার সন্তানের মধ্যে তিনজনই বিয়ে করে আলদা সংসার নিয়ে থাকেন।ছোট ছেলেকে নিয়ে বস্তির মধ্যে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন ৬৫ বছরের রহিমা খাতুন। অস্থায়ী গৃহপরিচারিকা হিসেবে একাধিক বাসায় কাজ করে জীবিকা চালাতে হয়। ‘যোগ্য’ হওয়ার পরও বয়স্ক ভাতা পান না তিনি।রহিমা খাতুনের মতো সারা দেশে এরকম অসংখ্য দুস্থ বয়স্ক বিধবা আছেন, যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা থাকার পরও রকারের আর্থিক সুধিবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যোগ্যদের ৪৬ শতাংশই এখনও সামাজিক সুরক্ষার আওতার বাইরে। তবে প্রতি বছরই সামাজিক সুরক্ষা জাল প্রসারিত করছে সরকার। এবারের বাজেটেও বাড়বে সেটা।মহামারির মধ্যেও আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ছে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।এই বরাদ্দ চলতি অর্থবছরে বাজেটের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।বয়স্ক, বিধবাসহ বর্তমানে আট ধরনের ভাতা আছে, যা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর বাইরে মহিলা ও শিশু, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ অনেক মন্ত্রণালয়ের আলাদা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু রয়েছে।এখন ৮৮ লাখ দরিদ্র লোক বয়স্ক, বিধবাসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছেন। মোবাইলের মাধ্যমে সরকার এখন সুবিধাভোগীদের কাছে সরাসরি টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। ফলে এ খাতে দুর্নীতি কমবে বলে আশা করছে সরকার।করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে বলে সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।এদের সুরক্ষা দিতে আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদেরা।পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম মনে করেন, ‘যোগ্যদের অনেকেই সামাজিক সুরক্ষার আওতার বাইরে এবং এতে ব্যাপক অপচয় হয়। তবে এ খাতে অনিয়ম কমিয়ে আনতে ডিজিটালাইজেশনসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনা মোকাবিলায় জরুরি তহবিল বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়াতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।তার মতে, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের অর্থ যাতে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা পান, তা নিশ্চিত করা এবং কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে নানা ধরনের অনিয়ম দূর করা জরুরি। তা না হলে এর সুফল সুবিধাভোগীরা পাবে না।অনেকেই মনে করেন, দারিদ্র্য বেশি গ্রামে। তাই সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজন সেখানে বেশি। ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, সামাজিক সুরক্ষায় গ্রাম-শহরের ভেদাভেদ করা উচিত নয়।
‘সচ্ছলরা’ বেশি সুবিধাভোগী
জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, শুধু হতদরিদ্ররাই সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পাবেন। কিন্তু সমাজের বহু সচ্ছল পরিবারও এ সুবিধা নিচ্ছেন।পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদসহ বেশ কিছু খাতে সামাজিক সুরক্ষার অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এখানে সমাজের বহু সচ্ছল পরিবারের বিনিয়োগ রয়েছে। ফলে প্রকৃত গরিব মানুষ সামাজিক সুরক্ষার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।পরিসংখ্যানে বলে, বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ মানুষ বিত্তশালী। কিন্তু এদের বড় একটি অংশ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সুবিধা গ্রহণ করছেন।২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিতরণ করা সুবিধার ৭৫ শতাংশই পেয়েছেন সচ্ছলরা। তার মানে, যারা পাওয়ার যোগ্য তাদের বেশির ভাগই পাচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রকৃত দরিদ্ররা এই কর্মসূচির মধ্যে ঢুকতে পারছেন না।ফলে এ খাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক নিরাপত্তার নীতিমালা পর্যালোচনা করে তা সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পেনশনের টাকা সামাজিক সুরক্ষা খাতে
বেশ আগে থেকেই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকা বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দেখানো হয়।বিদায়ী অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষায় যে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার মধ্যে পেনশন বাবদ আছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-ভর্তুকি বাবদ ৬ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।এই দুই খাতে বরাদ্দ, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মোট বরাদ্দের ৩৫ শতাংশ। এ দুটি খাত বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় দাঁড়ায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।এ ব্যয়েরও সিংহভাগ অর্থ প্রকৃতপক্ষে যাদের পাওয়ার কথা, তারা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, পেনশনের টাকা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দেখানো হয় কেন?সাবেক অর্থসচিব বর্তমানে মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মুহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, পেনশনের বিষয়টি সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা উচিত কি অনুচিত, তা আলোচনার দাবি রাখে।পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, পেনশনের টাকা সামাজিক সুরক্ষা খাতে আসার কথা নয়। এটা দরিদ্রদের সুরক্ষা দেয় না। এটা আলাদা খাতে দেখানো উচিত।অর্থনীতিবিদেরা বলেন, সিনিয়র সচিব, সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা অবসরের পর পেনশন পান। আবার নিম্ন স্তরের পিয়নও পেনশন পান। এগুলোর সব সামাজিক সুরক্ষার আওতায় পড়ে না।ধরা যাক, একজন সরকারি কর্মচারী ২০ বিঘা জমির মালিক। ওই ব্যক্তিকে কেন সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে? সামাজিক সুরক্ষা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। এটা পর্যালোচনা করা উচিত বলে মনে করেন তারা।বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পেনশনের টাকা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দেখানো উচিত নয়। কারণ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা হতদরিদ্র নন।’তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা শুধু তাদেরকেই দিতে হবে, যারা হতদরিদ্র, কোনো আয়-রোজগার নেই। এ জন্য যে নীতিমালা আছে, তা পর্যালোচনার পরামর্শ দেন তিনি।বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ১৩২টি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু নগদ অর্থও দেয়া হচ্ছে।তবে বেশির ভাগই কর্মসূচিভিত্তিক। বয়স্ক, বিধবা ভাতাসহ সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন আটটি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের অধীন রয়েছে মাতৃত্বকালীনসহ আরও কয়েকটি ভাতা। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী ভাতা। ভিজিএফ, ভিজিডি, টিআর, কাবিখাসহ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে ১১টি কর্মসূচি।এর বাইরে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।