করোনা ভাইরাস থেকে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। সেই প্রণোদনার ওপর ভর করে অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো ৭৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। প্রণোদনার অর্থে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে। বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যও। তবে প্রণোদনার পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠান এগিয়ে থাকলে ছোট উদ্যোক্তা, কৃষক ও নিম্নআয়ের মানুষরা অনেক কম পেয়েছেন।
বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতকে চাঙ্গা করতে প্রথমে ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করলেও দুবার বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। ওই প্যাকেজের আওতায় মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। গত অক্টোবর পর্যন্ত এ প্যাকেজের আওতায় ২৯ হাজার ১০৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সর্বমোট ২ হাজার ৬৩৩টি প্রতিষ্ঠান চলতি মূলধন হিসেবে এ ঋণ পেয়েছে। তবে প্যাকেজ থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের জুন ও জুলাইয়ের বেতন দিতে ৫ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।
রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য রয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)। করোনাকালে এ তহবিলের আকার ৩৫০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৫০০ কোটি ডলার। ৫০০ কোটি ডলার বা ৪২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারকদের ঋণ দিয়েছে ৪০ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা (৪৭৭ কোটি ডলার)।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, মহামারীর ধাক্কা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোও ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। সব মিলিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করেছে।
বড় শিল্পপতিদের ঋণ বিতরণের অগ্রগতি ভালো হলেও ছোট ও মাঝারি শিল্পে অগ্রগতি অনেক কম। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য গঠিত ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা; যা মোট তহবিলের মাত্র ৩৩ শতাংশ। তবে বিতরণের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে ৮ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। এ তহবিল থেকে ৪৮ হাজার ৫৩০ জন উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছেন।
করোনা সংক্রমণের আর্থিক ক্ষতি থেকে কৃষকদের রক্ষায় গঠন করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল। এ তহবিল থেকে ২ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ঋণ পেয়েছেন ৮৯ হাজার ৯৩৪ কৃষক। তবে কয়েকটি ব্যাংক এ তহবিলের ঋণ বিতরণে অনেক পিছিয়ে। তাই যেসব ব্যাংক বেশি ঋণ বিতরণ করেছে, তাদের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্বল্প আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে রয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার আরেকটি তহবিল। ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এতে সুদহার ৯ শতাংশ। তবে এ ঋণ বিতরণের গতি অনেক কম। অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৮৪৮ কোটি বিতরণ করা হয়েছে। ১০৯টি এনজিও ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এ ঋণ বিতরণ করেছে। তবে সরকারি সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল, কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এক পয়সাও এ তহবিলের ঋণ বিতরণ করেনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিল্প খাতকে সচল করতে প্রণোদনা প্যাকেজ সহায়তা করছে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী বড় শিল্প খাতগুলোর প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে পেরেছে এই প্যাকেজের কারণে। তবে বড়রা বেশি হারে পেলেও ছোটরা অনেক কম পাচ্ছেন। কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক গতি পুনরুদ্ধার সর্বস্তরে ঋণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।