ঋণপত্রের মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশ
সাত দেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে
এম শাহজাহান ॥ অভ্যন্তরীণ বাজারে দ্রুত দাম কমাতে পেঁয়াজের আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে আমদানি ঋণপত্র খোলার (এলসি) ক্ষেত্রে মার্জিন বা নগদ জমার হার ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পেঁয়াজবাহী জাহাজ দ্রুত ছাড়করণের জন্য বন্দর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া যেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরগণ দ্রুত পেঁয়াজ পেতে আমদানিকারকদের সহায়তা করবে। তুরস্ক থেকে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি। টিসিবির আমদানিকৃত প্রথম ধাপের পেঁয়াজ জাহাজীকরণ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত এই পেঁয়াজ দেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে সরকার। এছাড়া ভাল দামের আশায় কৃষকরা পেঁয়াজ ছাড়তে শুরু করেছেন। এ কারণে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে।
জানা গেছে, পেঁয়াজ আমদানিতে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ এবং বসুন্ধরা গ্রুপকে দিয়ে পেঁয়াজ আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। মেঘনাসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পেঁয়াজ এনে বাজার পরিস্থিতি সামাল দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এর পাশাপাশি ঢাকার শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক আমদানিকারকদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য বলা হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে খুব দ্রুত পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, এখন সবচেয়ে বড় কাজ আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত দেশে নিয়ে আসা। এজন্য আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ দেয়া হবে। টিসিবির আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত দেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তুরস্কের পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে। তিনি বলেন, টিসিবির পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েও পেঁয়াজ আনার চেষ্টা চলছে। এছাড়া ভাল দাম পাওয়ায় বাজারে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। নতুন করে আর দাম বাড়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় পেঁয়াজের সরবরাহ গত কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে। ভালমানের দেশী পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ভাল দামের আশায় কৃষকের ঘরে মজুদকৃত পেঁয়াজের বিক্রি শুরু হয়েছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ১০০-১১০ এবং ভারতীয় বড় আকৃতির পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এর পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশে টিসিবি ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। স্বল্প আয়ের মানুষ টিসিবি থেকে পেঁয়াজ কিনে ঘরে ফিরছেন। যদিও দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে তাদেরকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। খুব শীঘ্রই সংস্থাটি অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। এর ফলে ঘরে বসে অনেকে টিসিবির পেঁয়াজ কেনার সুযোগ পাবেন। কাওরানবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোঃ জসিম জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। আর এ কারণে নতুন করে দাম বাড়েনি। পেঁয়াজ আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে ভাল দামের আশায় যেভাবে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে এটা অব্যাহত থাকলে দাম কমতে পারে।
আমদানিতে এলসি সহজ করা হলো ॥ পেঁয়াজ আমদানি বাড়াতে এলসি মার্জিন আরও সহজ করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির আমদানি ঋণপত্র খোলার (এলসি) ক্ষেত্রে মার্জিন বা নগদ জমার হার ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্থানীয় বাজারেও পেঁয়াজের মূল্য উর্ধগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পেঁয়াজ আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য আপনাদেরকে পরামর্শ প্রদান করা হলো।’ এর আগে গত ২ মার্চ জারি করা এক সার্কুলারে পেঁয়াজসহ কিছু ভোগ্যপণ্যের আমদানিতে ঋণপত্র খোলার মার্জিন ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল এক সার্কুলারে, কিন্তু তার মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বলবত ছিল।
এদিকে, হুট করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধে উদ্বেগ জানিয়ে ফের তা চালু করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে বাজার ঠান্ডা রাখতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন।
ঘোষণা না দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় অনুতপ্ত ভারত ॥ আগাম ঘোষণা না দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় ভারত অনুতপ্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন। ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেঁয়াজ রফতানি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভারতের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তবে, ভারত আগাম ঘোষণা না দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুতপ্ত বলে আমাদের জানিয়েছে।
সাত দেশ থেকে ৭৯ হাজার টন পেঁয়াজ আসছে ॥ ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সাত দেশ থেকে ৭৯ হাজার টন পেঁয়াজ আসছে। ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৭৯ হাজার ৩৯০ টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে ৩-১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১৭টি আমদানি অনুমতিপত্রের (আইপি) বিপরীতে এসব পেঁয়াজ আসছে।জাহাজে চীন, তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমার, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ড থেকে পেঁয়াজগুলো আনা হবে। উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, ২১ হাজার ৯১১ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য ৬৭টি আমদানি অনুমতিপত্র ইস্যু করেছি আমরা। পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নানা প্রণোদনার কারণে ব্যবসায়ীরা উৎসাহী হচ্ছেন। একজন আমদানিকারক জানিয়েছেন, পচনশীল পণ্য হওয়ায় যত দ্রত সম্ভব রেফার কনটেইনারে পেঁয়াজ আনার চেষ্টা চলছে। পরিমাণ বেশি হলে হিমাগার সুবিধা আছে এমন কার্গো জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজ আনা হবে। যদি ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ অনুকূলে থাকে তবে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখা হবে।