বান্দরবানে পাহাড়ে বারি মাল্টা-১ জাতের বাগান করে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন চাষিরা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের পরীক্ষামূলক ভাবে বান্দরবানের পাহাড়ের বুকে মিশ্র ফল বাগানে উন্নত জাতের বারি মাল্টা-১ চাষ শুরু হয়। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় এচাষে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠেছে পাহাড়ের জুমিয়া চাষিরা। বর্তমানে বান্দরবানে বাণিজ্যিকভাবে এই চাষ করতে শুরু করেছে জুমিয়া চাষিরা। এই মুখে পয়সা আকৃতির খুবই উন্নত জাতের বারি মাল্টা-১ রোপন করার দুই বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া যাচ্ছে। মে মাসে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে এই মাল্টা ফল বিক্রি করা যায়।
কৃষি বিভাগ জানায়, বান্দরবানে কমলা, জাম্বুরা ও লেবু চাষের সফলতা দীর্ঘ বছর আগে থেকে রয়েছে। তবে মাল্টা জাতীয় ফলের চাষাবাদ খুবই কম ছিল। কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, মাল্টার চাষাবাদ পদ্ধতি ও চারা সমস্যার কারণে এই চাষ এখানে এতদিন করা যায়নি। রোয়াংছড়ি উপজেলার কৃষি অফিসার হাবিবুন নেছার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, প্রতিবছর বিদেশ থেকে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার মাল্টা আমদানি করা হয়।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরের পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথম বান্দরবান জেলা সদর, থানচি, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও লামা উপজেলায় ১৫০ জন কৃষকের মাধ্যমে জমি ও চাহিদা অনুসারে মিশ্র ফলের বাগানে মাল্টা চাষের আবাদ শুরু করা হয়। এই মাল্টা স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক ও ভালো ফলন হওয়ায় এই চাষে জুমিয়া চাষিরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার চাষি এই বারি মাল্টা-১ চাষে সংযুক্ত হয়েছে। চলতি বছর বান্দরবান জেলা ৩শ ৭৬ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় বাগানে ফলনও এসেছে প্রচুর পরিমান। এতে খুশি চাষিরাও।
রোয়াংছড়ি চাষি আনন্দ সেন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, তিনি ২০১৭ সালে তার মিশ্র ফল বাগানে ৫০টি মাল্টা চারা লাগিয়ে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে মাল্টা চাষ আরো সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তার বাগানে ৫’শ এর অধিকার মাল্টা গাছ রয়েছে। চলতি বছরের তার বাগানে ৫০টি গাছে প্রচুর পরিমান ফলন এসেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক বেশি। সদর উপজেলার নারী জুমিয়া মাল্টা চাষি মেসাচিং মারমা জানান, ৫০ শতক পাহাড়ি জমিতে ১৫০টি মাল্টা গাছ রয়েছে তার। গত বছর এই বাগানের মাল্টা বিক্রি করে ৩৫ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি। এবার বাগানে প্রচুর পরিমান মাল্টা ফল আসায় ব্যপারীরা চলতি বছর অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে।
এখানকার মাটি এসেটিক হওয়ায় লেবু জাতীয় ফসলের জন্য খুবই উপযোগী। এ কারণে পাহাড়ের চাষিদের বারি মাল্টা-১সহ লেবু জাতীয় ফসলের চাষাবাদে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাহাড়ের লেবু জাতীয় ফলজ চাষাবাদে ব্যাপক সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে এই চাষাবাদে উদ্যোগ নিয়ে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করে প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।