রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মূল যন্ত্রাংশ নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা পারমাণবিক চুল্লি ও একটি স্টিম জেনারেটর মংলাবন্দরে পৌঁছেছে। গত বৃহস্পতিবার সেগুলো মংলা থেকে রূপপুরের উদ্দেশে আসতে শুরু করেছে। রাশিয়ান পতাকাবাহী এমভি ডাইসি নামক জাহাজটি রাশিয়ার ভলগা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে মংলাবন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে ভিড়ে। জাহাজটিতে আমদানিকৃত দুই হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টনের মেশিনারি পণ্য রয়েছে।
গত বুধবার সকাল থেকে মংলাবন্দরের জেটিতে ওইসব পণ্য খালাস কাজ শুরু হয়েছে। খালাসের সাথে সাথেই তা সড়ক ও নদী পথে যেতে শুরু করে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘বহুকাক্সিক্ষত রূপপুর কেন্দ্র সচল হওয়ার জন্য যেসব পণ্য আসার কথা ছিল সেগুলো গত মঙ্গলবার বন্দরে এসেছে। আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে সবগুলো যন্ত্রাংশ নদী ও সড়ক পথে রূপপুর পৌঁছে যাবে।’ খালাসের সাথে সাথে সেগুলো সড়ক ও নদীতে পথে যেতে শুরুও করেছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রশিয়ার ভোলগোদোনস্কে এইম-টেকনোলজি (রোসাটমের যন্ত্র উৎপাদনকারী শাখা-জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশ) বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পরমাণু কেন্দ্রের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। রাশিয়ার বৃহত্তম পরমাণু যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী এলাকা ভোলগা ধোনকে অটোম্যাসের কারখানায় প্রস্তুত একটি ভিভিইআর-১২০০ চুল্লিপাত্র (রিঅ্যাক্টর ভেসেল) ও একটি স্টিম জেনারেটর রূপপুর পরমাণু কেন্দ্রের জন্য সমুদ্রপথে পাঠানো হয়েছে।
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’টি ইউনিট নিয়ে গঠিত। প্রতিটি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম ইউনিটটির কার্যক্রম শুরু হবে ২০২৩ এবং দ্বিতীয়টির ২০২৪ সালে।
জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশের মহাপরিচালক আন্দ্রেই নিকিপেলোভ বলেন, গুণগতমানের যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও সেগুলো সময়মতো সরবরাহ করাই আমাদের অগ্রাধিকার। করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম চুল্লির সরঞ্জাম পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। এসব জিনিস গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশ সময় লাগবে। এগুলো ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ অতিক্রম করে বাংলাদেশে পরমাণুকেন্দ্রে এ বছরের শেষের দিকে পৌঁছাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এ ধরনের ভারী যন্ত্র স্থানান্তর ও পরিবহনের কাজ জটিল প্রক্রিয়াসম্পন্ন। চুল্লি পাত্রটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন এবং স্টিম জেনারেটর ওজন ৩৪০ টন। আলাদাভাবে চুল্লিপাত্র ও স্টিম জেনারেটর বিশেষ স্বয়ংক্রিয় যানে করে ভোলগোদোনস্কে সিমলিয়ান্সক জলাধারের একটি জেটিতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে এগুলো নভোরোসিয়েস্কে পৌঁছাবে, এরপর সেখান থেকে কৃষ্ণসাগর ও সুয়েজ ক্যানেল হয়ে বাংলাদেশের (রূপপুর) বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছাবে।রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি ইউনিটের জন্য জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশ ১৪ ধরনের সরঞ্জাম প্রস্তুত করবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ চুল্লিপাত্র, স্টিম জেনারেটর যন্ত্রাংশ, প্রধান সঞ্চালন পাইপলাইন, প্রধান সঞ্চালন পাম্প, চাপ কমানোর যন্ত্র, জরুরি শীতলকরণ ব্যবস্থা, নিরাপত্তাব্যবস্থা।এ ছাড়াও টারবাইন হলের জন্য উচ্চচাপ তৈরির হিটার (হাই প্রেসার হিটার), ভ্যাকিউম, কনডেনসেট ও ফিড পাম্প ও টারবাইন ইউনিট পুনরায় গরম করার যন্ত্র প্রস্তুত করবে জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশ। ২০১৮ খেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১৩ হাজার টনের ওপর বিভিন্ন অদ্বিতীয় যন্ত্রপাতি তৈরি ও সরবরাহ করবে জেএসসি অটোমেনার গোম্যাশ।উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে প্রকল্পটি নির্মাণের প্রথম প্রস্তাব করা হয়। তৎকালীন সরকার ২৫৩ দশমিক ৯০ একর জমি বরাদ্দ দেয়। ওই সরকার বেশকিছু পর্যালোচনার ভিত্তিতে ১৯৬৩ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুরে ৭০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়।