প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তান ১৯৭১ সালে যে নৃশংসতা চালিয়েছিল তা অমার্জনীয়। বাংলাদেশ কখনো তা ভুলতে এবং ক্ষমা করতে পারবে না। একাত্তরের ঘটনা ভুলে যাওয়া বা ক্ষমা করা যায় না। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ গ্রন্থের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বই থেকে সবাই ১৯৪৮-৭১ সময়ের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা জানতে পারবে। শেখ হাসিনা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র উর্দু সংস্করণ পাকিস্তানে অন্যতম বহুল বিক্রিত বই। এটি অন্যান্য দেশের পাশাপাশি পাকিস্তানেও বহুল পঠিত। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। হাইকমিশনার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শুভ কামনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিলে তিনিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। হাইকমিশনার বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তাঁদের উপদেশ দিয়েছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের বিস্ময় সম্পর্কে জানতে।
বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক ফোরাম নিষ্ক্রিয় রয়েছে জানিয়ে তিনি দুই দেশের মধ্যকার পররাষ্ট্রবিষয়ক পরামর্শক (এফওসি) কার্যক্রম সক্রিয় করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতে এখানে কোনো বাধা নেই। নতুন হাইকমিশনার বলেন, পাকিস্তান কোনো বাধা ছাড়াই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জবাব দেন যে, তিনি আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের ভিত্তিতে সম্পর্ক বজায় রাখায় বিশ্বাস করেন। বিশ্ব মঞ্চে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন হাইকমিশনার। প্রধানমন্ত্রী নতুন হাইকমিশনারকে স্বাগত জানান এবং দায়িত্ব পালনে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
সুইডেন ও স্পেনকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান : দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে উল্লেখ করে সুইডেন এবং স্প্যানিশ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকায় নবনিযুক্ত সুইডিশ এবং স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূত গণভবনে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি এ আহ্বান জানান। সুইডিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সেজেন্দ্রা বার্গ ভন লিনডি বলেন, আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছি। আমরা সেখানে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। ফলে সুইডেন এখানে বিনিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশ-সুইডেন সম্পর্ককে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে সুইডেন বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ; বিশেষ করে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো তুলে ধরেন এবং তাঁর মেয়াদের প্রায় ১২ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করছে। কভিড-১৯ মহামারীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পেয়েছে। তবে তাঁর সরকার পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি চলাকালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক সম্পর্কিত ক্রয় আদেশ বাতিল না করায় সুইডেনের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী নতুন রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশে তাঁর মেয়াদকালে সব ধরনের সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস দেন।
অপরদিকে, পৃথক এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এবং উচ্চ-প্রযুক্তিগত সুবিধাসম্পন্ন হাইটেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগের জন্য স্পেনের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো ডি বেনিতেজ সালাসকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছি। আমরা সেখানে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ এবং সুযোগ রেখেছি। ফলে স্পেন এখানে বিনিয়োগ করতে পারে।
দেশে তৈরি পোশাক ছাড়াও পাট, চামড়া ও ওষুধ খাতে সাম্প্রতিক সময়ে শক্তিশালী খাত হিসেবে দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্পেন এই খাতগুলোতে বিনিয়োগের কথা ভাবতে পারে। এ ছাড়াও তৈরি পোশাক এবং হাইটেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে স্পেনের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের দেওয়া ট্যাক্স সুবিধা এবং আকর্ষণীয় বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগবান্ধব প্যাকেজ পেতে পারে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্পেন পানি পথেও বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
কভিড-১৯ মহামারীর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ৮.১৫ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৫.৪ শতাংশে, তবে তাঁর সরকার পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
অনেক দেশের মধ্যে কভিড সংকটের মাঝেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন বাংলাদেশ সরকার প্রধান। স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূতও বাংলাদেশের কভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন। স্পেন বাংলাদেশের সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রেলপথে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায় বলে উল্লেখ করেন দেশটির রাষ্ট্রদূত। তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য স্পেন বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ বৃহত্তম গন্তব্য বলে জানান রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো ডি বেনিতেজ। প্রধানমন্ত্রী স্পেনের নতুন রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান এবং এখানে তাঁর মেয়াদকালে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।