পদ্মা সেতুর ৫ হাজার ৪০০ মিটার এখন দৃশ্যমান

admin
নভেম্বর ৮, ২০২০ ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে বসানো হয়েছে ৩৬তম স্প্যান। এর ফলে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৫ হাজার ৪০০ মিটারপ্রথম আলো

পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ২ ও ৩ নম্বর পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয়েছে ৩৬তম স্প্যান। এর ফলে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৫ হাজার ৪০০ মিটার। আজ শুক্রবার সকাল ৮টা ৪২ মিনিটের দিকে স্প্যানটি সফলভাবে বসানো হয়।

৩৫তম স্প্যানটি বসানোর ৭ দিনের মাথায় এই স্প্যান বসানো হলো। সম্পূর্ণ সেতু দৃশ্যমান হতে বাকি রইল আর মাত্র ৫টি স্প্যান। গত ৩১ অক্টোবর ৩৫তম স্প্যানটি বসানো হয়েছিল।

সেতুসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ওয়ান-বি স্প্যানটি সেতুর ২ ও ৩ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়। আলোর স্বল্পতার কারণে স্প্যানটি ওই দিন বসানো যায়নি। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আবারও বসানোর কাজ শুরু হয়। সকাল ৯টা ৪২ মিনিটের দিকে স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়। এই স্প্যান বসানোর মাধ্যমে সেতুর ৫ হাজার ৪০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে।

৩৫তম স্প্যান বসানোর ৭ দিনের মধ্যে এই স্প্যান বসানো হলো। গত ৩১ অক্টোবর মাওয়া প্রান্তের ৭ ও ৮ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ৩৫তম স্প্যান। সম্পূর্ণ সেতু দৃশ্যমান হতে আর মাত্র বাকি রইল ৫টি স্প্যান। গত মাসে বসানো হয় ৪টি স্প্যান। এই মাসেও ৪টি স্প্যান বসানোর কথা আছে।

সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ ওয়ান-বি নামের স্প্যানটিকে নিয়ে রওনা হয়। ২-৩ নম্বর পিলারের অবস্থান মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। পদ্মা নদীর একাবারে তীরের কাছাকাছি। অল্প সময়ের মধ্যে স্প্যান খুঁটির কাছে পৌঁছে যায়। তবে সব ধরনের চেষ্টা সত্ত্বেও সময় স্বল্পতার কারণে বৃহস্পতিবার স্প্যান বসানো যায়নি। শুক্রবার সকালে আবারও কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ৯টা ৪২ মিনিটের দিকে পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।

সেতু কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ১২ নভেম্বর ৯ ও ১০ নম্বর খুঁটিতে ৩৭তম স্প্যান (স্প্যান ২-সি), ১৬ নভেম্বর ১ ও ২ নম্বর খুঁটিতে ৩৮তম স্প্যান (স্প্যান ১-এ), ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটিতে ৩৯তম স্প্যান (স্প্যান ২-ডি), ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বর খুঁটিতে ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) এবং আগামী ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর ৪১ নম্বর স্প্যানটি (স্প্যান ২-এফ) বসানোর কথা রয়েছে। সবগুলো স্প্যান মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এর মধ্যে গত ৩১ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী, ১ হাজার ১৬৫টির বেশি রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১ হাজার ৬৪৬টির বেশি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।

এরপর একে একে বসানো হয়েছে ৩৫টি স্প্যান। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ০৩ ভাগ। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ ভাগ। এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৯৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত তারিখ অনুসারে ২০২১ সালের জুন মাসে সেতুর সব ধরনের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।